১০ নামের সুপারিশ করেছে সার্চ কমিটি

সুপ্রভাত ডেস্ক »

সার্চ কমিটির কাছ থেকে নামের প্রস্তাব পেয়ে তার ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তাদের সুপারিশ জমা দেন। খবর বিডিনিউজের।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ১০টি নামের সুপারিশ করেছে সার্চ কমিটি।
এর মধ্য থেকে একজন সিইসিসহ অনধিক পাঁচজনকে নিয়ে নতুন ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপ্রধান, যে কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করবে।
রাষ্ট্রপতি সুপারিশ পর্যালোচনা করে অচিরেই নতুন সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেবেন বলে সার্চ কমিটির সচিবের দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করতে যান সার্চ কমিটির সদস্য বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন, লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী এবং সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন।
সার্চ কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান অসুস্থতার কারণে যাননি বলে বঙ্গভবন সূত্র জানিয়েছে।
সাক্ষাৎ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটির সদস্যদের নিরলস প্রচেষ্টার জন্য তাদের প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদ জানান।
‘তিনি আশা করেন, কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে, যারা আগামীতে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনসমূহ অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে সক্ষম হবে।’
এবারই প্রথম আইনের অধীনে অনুসন্ধান কমিটি বা সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হচ্ছে। এর আগে দুবার সার্চ কমিটি গঠন করে ইসিতে নিয়োগ হলেও তখন আইন ছিল না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. সামসুল আরেফিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রেস সচিব বলেন, ‘অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা তাদের কার্যক্রমে সাচিবিক সহায়তাসহ সার্বিক সহায়তার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।’
২০১৭ সালে তখনকার সার্চ কমিটি যেদিন রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ তুলে দিয়েছিল, সেদিনই নিয়োগের আদেশ হয়েছিল।
এবারও তাই হচ্ছে কি না- সাংবাদিকরা প্রশ্ন রেখেছিল মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তিনি বলেন, ‘সার্চ কমিটি তাদের রিপোর্ট মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেটা গ্রহণ করেছেন। এখন তিনি এটা একটু পর্যালোচনা করবেন। পরে অতিসত্বর তিনি নির্দেশনা দেবেন।’
সুর্নিদিষ্ট সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই-এক দিনের মধ্যে যাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নোটিফিকেশন জারি করা হবে।’
সার্চ কমিটির সুপারিশের ১০টি নাম প্রকাশ করা হবে কি না- এ প্রশ্ন এড়িয়ে আনোয়ারুল বলেন, ‘নিয়ম তো হল পাঁচ জনের নাম ঘোষণা করা। যে পাঁচজনের নিয়োগ হবে, তা আপনারা জানতে পারবেন। কুইকলি হয়ে যাবে।’
কাদের কাদের নাম প্রস্তাব করেছেন, তা সার্চ কমিটিও প্রকাশ করেনি। কমিটির সভাপতি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ইতোপূর্বে জানিয়েছিলেন, এটা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।
তবে সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলসহ সবার কাছে চাওয়ার পর যে ৩২২টি নাম পেয়েছিল, তা প্রকাশ করেছে।
আর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান যেহেতু বলেছেন, তারা নিজেরা নতুন কোনো নাম যোগ করেননি, সেহেতু প্রস্তাবিত ১০ জনের নাম ৩২২ জনের তালিকার মধ্যে রয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে সার্চ কমিটি। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি পদের জন্য দুইজন এবং নির্বাচন কমিশনারের শূন্য পদের প্রতিটির জন্য দুজনের নাম তারা প্রস্তাব করবে রাষ্ট্রপতির কাছে।
সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তার তিনটি যোগ্যতা থাকতে হবে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে; বয়স ন্যূনতম ৫০ বছর হতে হবে; কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় পদে অন্তত ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
রাষ্ট্রপতি ৫ ফেব্রুয়ারি সার্চ কমিটি গঠন করে দেওয়ার পরদিন কমিটির সদস্যরা দায়িত্ব পালন শুরু করেন। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে আলোচনাসহ সাতটি বৈঠক করে তারা ১০ জনের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে। গত মঙ্গলবার তা চূড়ান্ত করার পরদিন তারা তা রাষ্ট্রপতির কাছে দিল।
সার্চ কমিটি: ফিরে দেখা
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন।
ছয় সদস্যের সেই সার্চ কমিটির প্রধান ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সদস্য ছিলেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য শিরীণ আখতার।
সেই সার্চ কমিটি সাবেক সচিব কে এম নূরুল হুদা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নাম প্রস্তাব করেছিল সিইসি হিসেবে। তার মধ্য থেকে নিয়োগ পান নূরুল হুদা।
আর আটটি নামের প্রস্তাব থেকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
সার্চকমিটির সুপারিশে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আরও যে চারটি নাম ছিল, তারা হলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক জারিনা রহমান খান ও অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
ইসিতে নিয়োগে সার্চ কমিটি প্রবর্তন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, ২০১২ সালে। সেই কমিটি ছিল চার সদস্যের।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন সেই সার্চ কমিটির অন্য তিন সদস্য ছিলেন- হাই কোর্টের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, পিএসসি চেয়ারম্যান এ টি আহমদুল হক চৌধুরী ও মহাহিসাব নিরীক্ষক আহমেদ আতাউল হাকিম।
সেই সার্চ কমিটি সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নাম প্রস্তাব করেছিল সিইসি হিসেবে।
পাশাপাশি চারজন কমিশনার হিসেবে একজন নারীসহ আটটি নাম সুপারিশ করেছিল। তারা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু হাফিজ ও শাহ মো. মনসুরুল হক, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব আবদুল মোবারক, সাবেক পুলিশপ্রধান হাদিস উদ্দিন আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাবেদ আলী, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক নিবন্ধক ফজলুল করিম, সাবেক দায়রা জজ মো. শাহনেওয়াজ এবং এনজিও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন মুরশিদ।
তার মধ্য থেকে কাজী রকিব সিইসি এবং আবু হাফিজ, আবদুল মোবারক, জাবেদ আলী, মো. শাহনেওয়াজ কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।