হামলা বিস্তৃত করেছে রাশিয়া

পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় প্রস্তুত জেলেনস্কি, দুই দেশের আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি : পুতিন

Trenches are prepared by the side of the road as a precaution against Russian attacks, in Kyiv, Ukraine on March 10. (Emin Sansar/Anadolu Agency/Getty Images)

সুপ্রভাত ডেস্ক »
ইউক্রেনে ‘সর্বাত্মক হামলার’ তৃতীয় সপ্তাহে এসে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমাঞ্চলীয় বেশ কয়েকটি শহরে একযোগে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। শুক্রবার তাদের ক্ষেপণাস্ত্র লুটস্ক ও ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক শহরের বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
রুশ বাহিনী প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের মধ্যপশ্চিমাঞ্চলীয় কেন্দ্র নিপ্রোতেও গোলাবর্ষণ শুরু করেছে।
মস্কো সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অবরুদ্ধ বন্দরনগরী মারিওপোলের উত্তরে অবস্থিত কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর ভলনোবাখার দখলে নিয়েছে বলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রিয়া। খবর বিডিনিউজ ও বাংলাট্রিবিউন।
রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর যেসব শহরে টানা গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে সেখানকার বাসিন্দারা শহরগুলো ছেড়ে তুলনামূলক নিরাপদ মনে হওয়া পশ্চিমের শহরগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছিল; লাখ লাখ মানুষ বড় বেসামরিক কেন্দ্র লিভভে এবং পরে সেখান থেকে অন্য দেশেও গেছে। শুক্রবার রুশ বাহিনী যেসব শহরে হামলা করেছে সেগুলো লিভভের নিকটবর্তী।
শুক্রবার লুটস্কে রাশিয়ার হামলায় ২ ইউক্রেনীয় সৈন্য নিহত ও ৬ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের প্রধান ইউরি পহুলিয়াকো।
ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্কের মেয়রও শুক্রবার ইউক্রেনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় শহরটিতে রুশ গোলা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এক ফেইসবুক বার্তায় তিনি লিখেছেন, ‘শত্রুরা ফ্রাঙ্কিভস্কে আঘাত হেনেছে।’
শহরের বাসিন্দাদের বিস্ফোরণের ছবি ও ভিডিও শেয়ার না দিতে অনুরোধ করার পাশাপাশি তিনি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার সতর্ক সংকেত ব্যবস্থাপনা কাজ করেনি বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মেয়র কয়েকটি জেলার বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের না হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন।
‘নিজের নিরাপত্তার জন্য ঘরেই থাকুন। বিপদ পেরিয়ে গেলে আমি জানাবো’, বলেছেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে রুশ বাহিনী উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় লুটস্কে একটি বিমানঘাঁটি ও জেট ইঞ্জিন ফ্যাক্টরি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
নিপ্রোতে বিমান হামলায় একজন নিহত এবং ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্কে বিস্ফোরণের খবরও পাওয়া গেছে।
এদিকে ইউক্রেনের উত্তরের শহর চেরনিহিভে রাতভর রুশ বিমান হামলায় শহরটির পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইউক্রেন রাসায়নিক অস্ত্র বা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করছে বলে মস্কোর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। রাশিয়া যদি এ ধরনের কোনো অস্ত্র ইউক্রেনে ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে মস্কোকে পাল্টা ‘ভয়াবহ নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে’ বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় রাসায়নিক অস্ত্রের স্থাপনা আছে, রাশিয়ার এ অভিযোগকে ‘অজুহাত’ অ্যাখ্যা দিয়েছে ওয়াশিংটন। রাশিয়া সম্ভবত এ ধরনের কোনো হামলা চালানোর পরিকল্পনায় এ অজুহাত দিচ্ছে, বলেছে তারা।
ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর মস্কো বিদ্যুৎগতিতে দেশটির রাজধানীতে হানা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল বলে অনুমান পশ্চিমা দেশগুলোর; কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় রাশিয়ার মূল আক্রমণকারী বাহিনী কিইভের উত্তরের এক মহাসড়কে প্রায় স্থবির হয়েই বসে ছিল।
তবে বেসরকারি মার্কিন উপগ্রহ কোম্পানি মাক্সারের সাম্প্রতিক ছবি বলছে, রুশ সাঁজোয়া যানের ইউনিটগুলো এখন কিইভের উত্তরপশ্চিমের হস্তমেলে অবস্থিত আন্তোনভ বিমানবন্দরের কাছের এলাকাগুলোতে ঢুকে পড়েছে ও চলাচল করছে। যুদ্ধের প্রথম কয়েক ঘণ্টায় রাশিয়া ছত্রীসেনা নামানোর পর থেকে ওই এলাকাগুলোতে তুমুল লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছিল।
এর ঠিক উত্তরে লুবিয়াঙ্কার কাছে ছোট ছোট এলাকায়ও বেশ কিছু সামরিক উপকরণ মোতায়েন রয়েছে, ছোট বড় কামানগুলোকে প্রস্তুত অবস্থায় অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, জানিয়েছে মাক্সার।
‘রাশিয়া সম্ভবত আগামী দিনে নতুন করে আক্রমণ চালাতে তার বাহিনীকে পুনরায় সংগঠিত করছে। এসব আক্রমণের মধ্যে রাজধানী কিইভে অভিযানও আছে’, গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
তাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, রসদ ঘাটতি সংক্রান্ত সমস্যা ও ইউক্রেনীয়দের তীব্র প্রতিরোধের মুখে রাশিয়ার স্থলবাহিনীর অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ধারণার তুলনায় সামান্যই।

১৬ দিনে ইউক্রেন ছেড়েছে ২৫ লাখ মানুষ

রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর ১৬ দিনে ২৫ লাখের বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা। শুক্রবার ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়। খবর বিডিনিউজের।
রয়টার্স লিখেছে, অভিবাসন সংস্থাটি সর্বশেষ একদিন আগে গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন দেওয়ার পর ইউক্রেনের অতিরিক্ত আরও ২ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছে।
আলাদাভাবে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ের সমন্বয়কারী সংস্থা জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনের সাড়ে ১৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এর আগে যুদ্ধ শুরুর অষ্টম দিনে জাতিসংঘ জানায়, ইউক্রেন থেকে ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রতিবেশি দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে।

পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় প্রস্তুত জেলেনস্কি: ইউক্রেন

ইউক্রেন সংকটের কূটনৈতিক সমাধানে জোর চেষ্টা চালিয়েছে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইতোমধ্যে পুতিনের সঙ্গে পশ্চিমা নেতাদের কয়েক দফা আলোচনা হলেও যুদ্ধ বন্ধে এখনও সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। তবে সংঘাত বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতে প্রস্তুত আছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনে সাক্ষাৎকারে এমন কথা জানালেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের উপ-প্রধান ইগোর জোভোকভা।
তবে জোভোকভা আরও বলেন, ওই আলোচনার সময় রাশিয়ার অবস্থান নিয়ে কোনও ধরনের আপস করা হবে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার তুরস্কের আনাতলিয়া শহরে রুশ এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তুরস্কের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে বড় কোনও অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। যদিও দুই দেশের প্রতিনিধিদের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক থেকে ইউক্রেন প্রত্যাশিত ফলাফল আশা করেনি বলে মন্তব্য করেন উপ-প্রধান জোভোকভা।
তিনি আরও বলেন, এটা খুবই ভালো যে তারা আলোচনায় বসেছেন। কিন্তু রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। যুদ্ধ বন্ধ, যুদ্ধবিরতি, সেনা প্রত্যাহার শুধু একজনের (পুতিন) সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই হয়।
জোভোকভা বলেন, কূটনৈতিক সমাধানে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি সবসময় প্রস্তুত আছেন। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট অথবা তার কোনও সহযোগীর কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে না।
ইউক্রেন-রাশিয়ার বৈঠকে ইতিবাচক অগ্রগতি’: পুতিন
ইউক্রেন সংকট সমাধানে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে যে আলোচনা চলছে তা থেকে ‘ইতিবাচক অগ্রগতি’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। মস্কোয় শুক্রবার মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। পুতিন লুকাশেঙ্কোকে বলেন, রাশিয়ার পক্ষ থেকে অংশ নেওয়া আলোচকরা আমাকে জানিয়েছেন, বৈঠকে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
২৪ ফেব্রুয়ারি পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনে খারকিভ, মারিউপোলসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। রাজধানী কিয়েভ দখলকে কেন্দ্র করে হামলা আরও জোরালো করেছে রুশ সেনারা। শহরগুলোতে প্রতিনিয়ত বোমাবর্ষণ চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের।
যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন এবং রুশ প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রতিবেশী বেলারুশ সীমান্তে ইতোমধ্যে তিন দফা বৈঠক হয়েছে। আলোচনা থেকে উল্লেখযোগ্য ফলাফল না এলেও মানবিক করিডোর স্থাপনে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার তুরস্কেও ইউক্রেন-রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠক থেকেও তেমন কিছু আসেনি। কোনও ফলাফল না এলেও রুশ প্রেসিডেন্ট মনে করছেন, দুই দেশের অব্যাহত বৈঠকে ইতিবাচক অগ্রগতি এসেছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি পুতিন।