সীমান্তে তৎপর চোরাকারবারি চক্র

উখিয়া-টেকনাফ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা মাথায় রেখে সরকার নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে বাড়িয়েছে কড়া নিরাপত্তা ও পাহারা। কোন অবস্থায় যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না হয় সে লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বিজিবি দিন রাত সীমান্তে কঠোর নজরদারি রাখছে।

সীমান্ত জুড়ে তাদের সীমাহীন কষ্ট এলাকার মানুষের চোখে এখন দৃশ্যমান। কিন্তু থেমে নেই চোরাচালান। কখনও বা ইয়াবা, আইস, নানা জাতের মাদক, কখনওবা স্বর্ণ, জালনোটসহ ইত্যাদি চোরাচালান সীমান্তে বন্ধ নেই। চোরাকারবারিরা সীমান্তের বিভিন্ন ফাঁকফোকর দিয়ে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যেতে তৎপর রয়েছে। প্রতিদিনই উদ্ধার করা হচ্ছে এসব অবৈধ পণ্য। এতো কড়াকড়ির পরও এবার নতুন করে মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ২৭টি মহিষের পাল। যা বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের মক্কর টিলা নামক স্থান হতে অবৈধভাবে আনা এসব মিয়ানমারের মহিষ উদ্ধার করে ৩৪ বিজিবির অধিনস্থ তুমব্রু বিওপির একটি টহল দল। সীমান্তে নিয়োজিত বিজিবি, পুলিশ প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাদক, অবৈধ পণ্যসহ পাচারকারীদের আটক করলেও রাঘববোয়ালরা ঠিকই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যার কারণে বন্ধ হচ্ছে না এসব অপকর্ম।

র‌্যাব-১৫ জানায়, ২৭ সেপ্টেম্বর ১২টার দিকে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালীর কাঁকড়া ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলো, নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ির আসরাফ ও একই ইউনিয়েনের মীর আহাম্মদের পুত্র ছৈয়দ করিম। এ সময় টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কাটাখালী সৈয়দ আহম্মদের পুত্র স¤্রাট হোসেন, আবদুল জব্বারের পুত্র কালাম ও ইসা মোহাম্মদের পুত্র মোস্তফা পালিয়ে যায়।

অপরদিকে, ২৫ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ২টার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ইয়াবার বিশাল চালানসহ ‘ইয়াবা স¤্রাট’ নামে খ্যাত আলমগীর ও তার দুই সহযোগীকে আটক করেছে র‌্যাব-৭। যার আনুমানিক মূল্য ৭ কোটি টাকা। উখিয়া উপজেলার বালুখালী ছড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলো উখিয়া থানার জালিয়াপালং এলাকার মৃত ফরিদ আলমের ছেলে মো. আলমগীর (৩০), একই উপজেলার আঞ্জুমানপাড়ার আলী মিয়ার ছেলে নজরুল মিয়া (২৬) ও পশ্চিম পালংখালীর আবদুল গফুরের ছেলে মুক্তার আহমেদ (৪২)।

বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গোয়েন্দা পরিদফতর শাখার মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ জানান, শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত দুইটার দিকে মিয়ানমার থেকে বাণিজ্যিক পণ্য নিয়ে আসে একটি ট্রলার। সেই ট্রলার কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে নোঙর করে। এরপর সেখান থেকে নেমে হলুদ রঙের একটি বস্তাসহ প্যারাবন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তিকে কোস্টগার্ড সদস্যরা থামার জন্য সংকেত দিলে তিনি বস্তাটি ফেলে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যান। পরে ওই বস্তার ভেতর থেকে ২০ কেজি গুড় ও ২ হাজার ১৫৯ দশমিক ৪৩ গ্রাম ওজনের ১৩টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৫২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।

বিজিবির কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মেহেদী হোসাইন কবির জানান, ২০ সেপ্টেম্বর ভোরে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের তুলাতলী বেতবুনিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক লাখ ইয়াবাসহ তিন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। আটককৃতরা হলো উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১০-সি ব্লকের বাসিন্দা মো. আব্দুস সালামের ছেলে মো. আলী হোসেন (৩৪) এবং একই ক্যাম্পের এফ-১৪ ব্লকের মৃত মো. শহীদুল্লাহ’র ছেলে মো. ইউনুস (৩৭) ও ডি-৪ ব্লকের মো. হাসু মিয়ার ছেলে মো. হোসেন আহম্মেদ (২৫)। তিনি বলেন, ভোরে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের তুলাতলী বেতবুনিয়া এলাকা দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার বড় একটি চালান পাচার হওয়ার গোপন খবর পেয়ে বিজিবির একটি দল অভিযান চালায়। এক পর্যায়ে মিয়ানমার থেকে সন্দেহজনক পাঁচজন লোককে আসতে দেখে বিজিবির সদস্যরা তাদের থামার জন্য নির্দেশ দেন। এ সময় তারা বিজিবির সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা চালায়। পরে বিজিবির সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিয়ে তিনজনকে আটক করতে সক্ষম হলেও দুইজন পালিয়ে যান। আটকদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে উখিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে।

এদিকে, ১৯ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় কোস্টগার্ডের একটি টহলদল অভিযান চালিয়ে ৪২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বলে জানান কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. আশিক আহমেদ।

তিনি বলেন, সোমবার মধ্যরাতে সীমান্তের নাফ নদীর জলসীমায় কোস্টগার্ডের একটি দল টহল দিচ্ছিল। এ সময় সন্দেহজনক একটি নৌকা থেকে বস্তা ভর্তি কিছু ফেলতে দেখতে পায় কোস্টগার্ড সদস্যরা। এতে কোস্টগার্ড সদস্যরা নৌকাটিকে থামার জন্য নির্দেশ দিলে জলসীমার শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যায়। পরে নদীর পানি থেকে ভাসমান অবস্থায় একটি বস্তা উদ্ধার করা হয়। পরে বস্তার ভেতর থেকে ৪২ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

সীমান্তে প্রতিদিনই ঘটছে এসব অবৈধ পণ্যের উদ্ধার অভিযান। কিন্তু রোধ হচ্ছে না কোন ক্রমেই। এলাকার অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন, রাঘব বোয়াল গ্রেফতার না হলে চোরাচালান বন্ধ সম্ভব নয়। তাই আগে এলাকার রাঘব বোয়ালদের গ্রেফতার করতে হবে। আর যারা এসব অভিযানে ধরা পড়ছে রাঘব বোয়ালদের ছত্র ছায়ায় কিছুদিন জেলে থেকে আইনের ফাঁকফোকরে বের হয়ে আবারও এ পেশায় জড়িয়ে পড়ে।