সিডিএ’র ইতিহাসের সবচেয়ে দামি প্রকল্প

বায়েজিদে নতুন আবাসন

ভূঁইয়া নজরুল >>
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ইতিহাসে সবচেয়ে দামি প্রকল্প হতে যাচ্ছে বায়েজিদ হাউজিং। চট্টগ্রামের খুলশীর আদলে পাহাড় ও সমতল ভূমির সমন্বয়ে এই আবাসন প্রকল্পটি গড়ে তুলতে চায় সিডিএ। সবকিছু ঠিক থাকলে তিন কাঠার প্রতিটি প্লট ৩০ লাখ টাকা দরে বরাদ্দ দেয়া হবে। এছাড়া চার কাঠার জন্য ৩৫ লাখ এবং পাঁচ কাঠার জন্য ৩৮ লাখ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আবাসন প্রকল্পটির কাঠা প্রতিমূল্য অতীতে সিডিএ’র যেকোনো আবাসন প্রকল্প থেকে বেশি। সে হিসেবে এটি সিডিএ’র সবচেয়ে দামি প্রকল্প হতে যাচ্ছে।
খুলশীর আদলে নতুন এই আবাসন প্রকল্পটি গড়ে তোলা হবে জানিয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, পাহাড়, হ্রদ, উন্মুক্ত স্থান, সবুজ বলয় এবং সমতল ভূমির সমন্বয়ে আবাসিক এলাকাটি গড়ে তোলা হবে। এটি হবে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে অনন্যা একটি আবাসিক এলাকা।
২০১৭ সালে অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকায় একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল প্রায় তিন হাজার প্লটের আবাসন প্রকল্প। প্রতি কাঠা ১৫ লাখ টাকা দরে বরাদ্দ দেয়ার শর্তে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সেই আবাসন প্রকল্পটির নাম ছিল ‘অনন্যা-২’। সেই প্রকল্পের মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বায়েজিদ বাইপাস এলাকায় প্রায় ৩৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯ দশমিক ৬৫ একর জায়গায় ১৬৭ প্লটের আবাসন প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
জানা গেছে, বায়েজিদ আরেফিন নগর এলাকায় সিডিএ’র নিজস্ব দুই একর জায়গা রয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ১৭ দশমিক ৬৫ একর খাস জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে মোট জমির পরিমাণ হবে ১৯ দশমিক ৬৫ একর। এপরিমাণ ভূমিতে আবাসন প্রকল্পটির ডিজাইন করা হয়েছে। ডিজাইনে ৩ কাঠার ১২৬টি, চার কাঠার ৭টি এবং পাঁচ কাঠার ৩৪টি প্লট রাখা রয়েছে। এছাড়া ১৮টি বাণিজ্যিক প্লট এবং ৩৬ দশমিক ৫ কাঠা জায়গার উপর অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক রয়েছে।
সিডিএ’র আবাসন প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এর আগে ২০১৭ সালে অনন্যা আবাসন প্রকল্প-২ নামে তিন হাজার প্লটের একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। সেই প্রকল্পে একনেকে কাঠাপ্রতি মূল্য ধরা হয়েছিল ১৫ লাখ টাকা। কাঠা প্রতি প্রকল্পের মূল্য বেশি ধরা হয়েছিল বলে ক্রেতারা তা গ্রহণ করবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান ছিল সিডিএ। সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের সময় নেয়া সেই প্রকল্পটির মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। গত মাসে মন্ত্রণালয়ের এক সমন্বয় সভায় বলা হয়েছে কেন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়নি তা সমীক্ষা করে জানানোর জন্য। এছাড়া ২০১৪ সালে সিলিমপুর আবাসিক এলাকায় (বর্ধিত ৭০টি প্লট) প্রতি কাঠা ১০ লাখ, ২০০৭ সালে অনন্যা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তিন কাঠার প্লটের জন্য চার লাখ, চার কাঠার জন্য পাঁচ লাখ এবং পাঁচ কাঠার প্লটের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬ লাখ টাকা। ২০০৬ সালে কল্পলোক দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রতি কাঠার দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ছয় লাখ এবং ২০০৪ সালে কল্পলোক প্রথম পর্যায়ে প্রতি কাঠা ৩ লাখ ২৫ হাজার করে দর নির্ধারণ করা হয়েছিল।
দামের এই পার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘মৌজা মূল্যের দামের উপর প্লটের দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। অনন্যা আবাসিক এলাকা-১ বাস্তবায়নের সময় শহরের মৌজার দর বেশি ছিল এবং হাটহাজারী অংশের মৌজার দাম কম ছিল। সে হিসেবে গড়ে গিয়ে এই প্রকল্পে কাঠা প্রতি দাম কমে এসেছিল। পরবর্তীতে সরকার ভূমি অধিগ্রহণের তিনগুণ মূল্য নির্ধারণ করার পর থেকে দাম বেড়ে যায়। আর এতে অনন্যা আবাসিক প্রকল্প-২ এর কাঠা প্রতি মূল্য বেশি হয়েছে।’
উল্লেখ্য, সরকারের সকল প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ অন্যতম ফ্যাক্টর। ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়।