সাতদিনেও চেয়ারম্যান মিরানের নাগাল পায়নি পুলিশ 

নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া :

কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরুচুরির অপবাদে মা-মেয়েকে রশি বেঁধে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ সাতদিনেও মামলার আসামি অভিযুক্ত হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম মিরানকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

নির্যাতনের শিকার পারভীন আক্তার বাদি হয়ে গত মঙ্গলবার চকরিয়া থানায় মামলাটি করেন। মূলত মামলাটি রুজু হবার পর থেকে চেয়ারম্যান মিরান আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না বলে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিুবুর রহমান। তিনি বেেলন, মামলার আসামি চেয়ারম্যান মিরানকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাকে যখনই পাওয়া যাবে, অবশ্যই গ্রেফতার করা হবে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও নির্দেশনা রয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিষয়টি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছেন, চেয়ারম্যান মিরান যেহেতু বর্তমানে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। তাই তাকে পাওয়া মাত্র আটকের জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও ইউনিয়ন পরিষদ ও বাড়িতে তাকে পাওয়া না যাওয়ায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, মা-মেয়েকে নির্যাতনের সংবাদ সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় ২৯ আগস্ট চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের পক্ষে ২৮ আগস্ট সকালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হারবাং স্টেশন এলাকায় মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে।

এদিকে, এত বড় একটি ঘটনা সংঘটিত হবার পরও দলের পদবিধারী মিরানের বিরুদ্ধে তাঁর রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ কোনো ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সাধারণ মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী জানান, চেয়ারম্যান মিরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ পায়নি দলীয় তদন্ত কমিটি। তাই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, উল্টো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দলের ভেতর যারা নানাভাবে অপপ্রচার চালিয়েছে তাদের শোকজ করা হয়েছে।

শোকজ বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাউল হক বলেন, মা- মেয়েকে নির্যাতনকারী ইউপি চেয়ারম্যান মিরানের পক্ষে কথা না বলা ও সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে আমাকেও শোকজ করা হয়েছে। এ শোকজের মাধ্যমে একজন নারী নিযার্তনকারী ও বহু অপকর্মের হোতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

 

জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, হারবাংয়ের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  কমিটির প্রতিবেদনে যদি চেয়ারম্যান মিরান দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তা করবে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে।

এদিকে, মা ও দুই মেয়েসহ ৫ জনকে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার দেবের আদালতের নজরে আসে। আদালত বিষয়টির আলোকে জনস্বার্থে স্বতোপ্রণোদিত হয়ে একটি মামলা গ্রহণ করেন। আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে চকরিয়া সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মতিউল ইসলামকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

অপরদিকে উল্লিখিত ঘটনায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিতে কক্সবাজারের স্থানীয় সরকার বিভাগের ডিডিএলজি (উপসচিব) শ্রাবন্তী রায়কে আহবায়ক ও চকরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হোসেন এবং হারবাং ইউনিয়নের উপজেলা ট্যাগ অফিসারকে তদন্ত কমিটির সদস্য করা হয়েছে। উক্ত কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে আবেদনের মাধ্যমে আরো সময় বাড়িয়েছেন।

প্রসঙ্গত চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা গ্রামে গত ২১ আগস্ট গরুচুরির অপবাদে মা-মেয়েসহ পাঁচজনকে রশিতে বেঁধে নির্যাতনের পর ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় মারধর করেন চেয়ারম্যান মিরানুল। এই ঘটনায় ২৫ আগস্ট হারবাং ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামসহ ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০/৩০ জনের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় মামলা করা হয়। নির্যাতনের শিকার পারভিন আক্তার বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

ওই মামলায় পুলিশ ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে এজাহারনামীয় আসামি গরুমালিকের ছেলেসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠিয়েছে।