সরকারি বাসায় ভাড়া ছাড়া বসবাস

চার বছরে ২০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ


চকরিয়া উপজেলা পরিষদ


 

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সরকারি ডরমেটরিতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের একটি অংশ দীর্ঘদিন পরিবার-পরিজন নিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করে আসলেও বেশিরভাগ কর্মচারী বাসা ভাড়া পরিশোধ করছেন না। অভিযোগ উঠেছে, কোয়ার্টার দেখভালে দায়িত্বে থাকা সংশিশ্লষ্টদের অবহেলার সুযোগে উপজেলা পরিষদের স্টাফ কোয়ার্টারের অন্তত সাতটি ভবনে ৪/৫ বছর ধরে ৩০ থেকে ৪০ জন সরকারি কর্মচারী বিনা ভাড়ায় বসবাস করছেন। আর এই অবস্থার কারণে গেল চারবছরে বাসা ভাড়া বাবদ উল্লেখিত কর্মচারীরা সরকারের প্রায় ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁিক দিয়েছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বিগত ৪-৫বছর যাবত সরকার বাসাভাড়া বাবত তাদের কাছ থেকে একটি টাকাও পাননি। সরকারি কর্মচারীদের বেতন থেকে বাসাভাড়া কর্তনে হিসাররক্ষন বিভাগের দায়িত্ব থাকলেও সংশ্লি­ষ্টরা উল্লে­খিত সময়ের মধ্যে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিষয়টি প্রসঙ্গে চকরিয়া উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নন্দন পাল বলেন, উপজেলা পরিষদের স্টাফ কোয়ার্টারের সরকারি বাসায় কারা থাকছে বা কোন দপ্তরের কর্মচারী থাকছে তা আমাদের জানার বিষয় নয়। মূলত: সংশ্লিষ্ট বিভাগ (কর্মচারীরা যে দপ্তরের অধীনে চাকরি করেন) থেকে অথবা উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানালে আমরা তাদের বেতন থেকে বাসা ভাড়া কর্তন করতাম। তিনি বলেন, উল্লেখিত সময়ে সরকারি কোন দপ্তর বা দপ্তর প্রধান সেই বিষয়টি আমাদেরকে পত্র দিয়ে অবহিত না করায় আমরা উল্লেখিত কর্মচারীদের বেতন থেকে বাসা ভাড়া কর্তন করেনি। তবে আমরা তাদের অফিস থেকে প্রেরিত বিল দেখেই প্রতিমাসে বেতন বিল পাশ করেছি মাত্র। অন্যদিকে ব্যাপক অনুসন্ধান শেষে বিষয়টির আলোকে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত চকরিয়া উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়নসমন্বয় সভায় অভিযোগ উপস্থাপন করেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্টু। এরপর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটি। ওইসভার সিদ্বান্তের আলোকে সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর সুফলভোগী সরকারি এসব কর্মচারীদেরকে জরুরীপত্র দিয়ে ভাড়াবাসা পরিশোধ করণে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন সচিব ও চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কমল কান্তি পাল।

স্বাক্ষরিত পত্রে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে উপরোক্ত বিষয়ে জরুরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চকরিয়া উপজেলা হিসাবরক্ষন কর্মকর্তাকেও বিশেষ তাগাদা দিয়েছেন সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব। জানতে চাইলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব ও চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কমল কান্তি পাল।

তিনি বলেন, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভেতরে সরকারি ডরমেটরি (স্টাফ কোয়ার্টার) বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করেও বেশিরভাগ কর্মচারী বাসাভাড়া পরিশোধ করেনি। অথচ প্রতিমাসে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা বেতন-ভাতার সঙ্গে বাসাভাড়াসহ সবধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে আসছে সরকার থেকে। আর বেতন থেকে ভাড়া কর্তনের বিষয়টি উপজেলা হিসাবরক্ষন বিভাগের দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তাঁরা সেটি কোনদিন অডিটও করেননি।

তিনি বলেন, সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর সুফলভোগী সরকারি এসব কর্মচারীদেরকে জরুরিপত্র দিয়ে ভাড়াবাসা পরিশোধ করণে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।   অগ্রগতি না হলে উপজেলা পরিষদ সরকারি বাসা বরাদ্দ কমিটির পরবর্তী সভার সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।