সরকারি আবাসন প্রকল্পের নামে কাটা হচ্ছে পাহাড়

কক্সবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

উচ্চ আদালতের আদেশে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় জেলা প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ ঘোষিত আবাসন প্রকল্পে পাহাড় ও গাছ কেটে পাকা স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণ করা নিষিদ্ধ করা হলেও তা মানা হচ্ছে না।

এই স্থাপনা ও রাস্তা নির্মাণ বন্ধ করতে একজন সচিব, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ ৭ সরকারি কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ করেছেন কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজার।

সংগঠনের পক্ষে প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ (মামুন) ২৫ এপ্রিল লিখিতভাবে এ অভিযোগ দিয়েছেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বন বিভাগের প্রধান বন সংরক্ষক, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালককে এই অভিযোগ দেয়া হয়।

অভিযোগে বলা হয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কোলঘেঁষা হোটেল-মোটেল এলাকা কলাতলী। এর মূল সড়কের পাশে পাহাড়ের ঢালে তৈরি করা হয়েছে একটি আবাসন প্রকল্প। দেশের বন আইন ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড়ি এই বনভূমি আবাসনের জন্য ব্যবহার করার কথা নয়। অথচ সংরক্ষিত বন ঘোষিত এলাকায় প্রকল্পটি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন প্রকল্প। উচ্চ আদালতের আদেশে ঘোষিত অবৈধ এই আবাসন প্রকল্পে গত এক মাস ধরে পাহাড় ও গাছ কেটে বিভিন্ন পাকা স্থাপনা ও চলাচলের রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে, অন্যদিকে উচ্চ আদালতের আদেশও লঙ্ঘিত হচ্ছে।

অভিযোগে বলা হয়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকল্পটিতে পাহাড় কাটা বন্ধে ২০০৬ সালে হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ৮ জুন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ আবাসন প্রকল্পের বরাদ্দ বাতিল, পাহাড়ের কোনো অংশ না কাটা, রক্ষিত বন এলাকায় সব ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা ও বন ধ্বংস না করার আদেশ দেন।

আদালতের এই রায় বাস্তবায়িত না হওয়ায় পরে ১২ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করে ‘বেলা’। আদালত কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয়ে সময় প্রার্থনা করেন তিনি। ওই সময় তিন মাসের মধ্যে সব স্থাপনা উচ্ছেদ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের অঙ্গীকার করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসকের এ অঙ্গীকারের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনো এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।