শেখ হাসিনা আপনাকে স্যালুট

রুশো মাহমুদ »

স্বপ্নের সেতু এখন বাংলাদেশের প্রতীক। পরিকাঠামো প্রযুক্তির এক বিস্ময় পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু এখন এক জাতীয় আবেগ। এ আবেগকে ছড়িয়ে দিয়েছেন সারাদেশের মানুষের মাঝে যিনি, তিনি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের সারথি সাহসী এই মানুষটি বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন বিশ্বমঞ্চে এক অন্য উচ্চতায়।

১০ বছর আগে, বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতুপ্রকল্প থেকে হাত তুলে নেওয়ার পরে একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিল তিল করে নিজেদের অর্থে মূল পদ্মা সেতু তৈরি করেছে বাংলাদেশ।

আজ ২৫ জুন এই সেতুর পথ চলা শুরু। এটি দোতলা সেতু। সেতুর উপরে চার লেনের চওড়া রাস্তায় ছুটবে গাড়ি। নীচের তলায় রেলপথে চলবে ট্রেন।

পদ্মা সেতু শুধু রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কানেক্টিভিটি বাড়াবে না, আন্তদেশীয় ও ভবিষ্যতে বিশ^ যোগাযোগেও রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সময় ও দূরত্ব কমাবে। ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের অংশ হবে পদ্মা সেতু। সিঙ্গাপুর থেকে মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু পেরিয়ে ভারত, পাকিস্তান ঘুরে ইউরোপে যাবে ট্রেন।

পদ্মা সেতু দাঁড়িয়ে আছে ৪০টি মজবুত পাইল ইস্পাতের স্তম্ভে। ১২২ মিটার পর্যন্ত গভীরে গেছে এই স্তম্ভের ভিত। পৃথিবীর আর কোনও দেশে আর কোনও সেতুর স্তম্ভ এত গভীরে নেই।

৪৭৫ বছরের ভূমিকম্প রেকর্ড বিবেচনায় নিয়েই পদ্মা সেতু নকশা করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে ওপরের কাঠামো আর পিলারের মধ্যে বিয়ারিং বসানো হয়েছে। বিয়ারিংয়ের গুণগত মানে একফোঁটা ছাড় দেওয়া হয়নি। ডাবল কারভেচার ফ্রিকশন পেনডুলাম বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে পদ্মা সেতু নির্মাণে, যা ভূমিকম্পের আঘাত থেকে সেতুকে রক্ষা করবে। রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে।

সারা বিশ্বে খরস্রোতা যতো নদী আছে তার একটি বাংলাদেশের পদ্মা নদী। পৃথিবীর ১০ থেকে ১৫টা বড় বড় নদীর মধ্যে দুটো হচ্ছে গঙ্গা ও ব্রম্মপুত্র। পদ্মা নদী হচ্ছে এই দুটো নদীর যোগফল। এই নদীতে প্রবাহিত পানির পরিমাণ, নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা এবং তলদেশে মাটির ধরন- এসব কিছুর কারণে এর উপর সেতু নির্মাণ করা ছিল অসম্ভব রকমের কঠিন এক কাজ।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই অসম্ভব কাজটিই সম্ভব হয়েছে এবং প্রায় আট বছরের নির্মাণ কাজ শেষে এই সেতু আজ উদ্বোধন করা হচ্ছে ।

পদ্মা সেতুপ্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ছিলেন অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর পর এই দায়িত্বে আছেন অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামীম জাহান বসুনিয়া। কমিটিতে বাংলাদেশিদের মধ্যে আছেন নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ ও পাইলিং বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হোসাইন মো. শাহীন। আরেক সদস্য মাটি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ এম এম সফিউল্লাহ গত বছর মারা যান। বিদেশিদের মধ্যে জাপানের দুজন, ন্যাদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের একজন করে বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।

মূল সেতুতে প্রায় ২ লাখ ৮৯ হাজার টন স্টিলের প্লেট লেগেছে, যার সবই এসেছে চীন থেকে। বেশির ভাগ পাথর এসেছে ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। স্টিলের মালামাল ও পানি নিরোধক উপকরণ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। রঙের পুরোটাই যুক্তরাষ্ট্রের। অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে পাইপ ও পলিমার। বিশেষ সিমেন্ট সিঙ্গাপুর থেকে ও রেলওয়ে গার্ডার এসেছে লুক্সেমবার্গ থেকে। মালয়েশিয়া থেকে এসেছে কেমিক্যাল।

মূল সেতু, নদীশাসন ও সংযোগ সড়কে সিমেন্ট ব্যবহার হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৮৬ হাজার টন। সেতু ও সংযোগ সড়কে রড লেগেছে ১ লাখ ৮ হাজার টন। বালু লেগেছে প্রায় ৬৫ লাখ ঘনমিটার। সংযোগ সড়ক নির্মাণে ইট লেগেছে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি। কংক্রিটের ব্লক ব্যবহৃত হয়েছে ৮০ লাখ। সবই দেশীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

কেবল চ্যালেঞ্জ নয়, ভিতরে বাইরের অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। সাহস আর সংকল্পে ভর করে পৌঁছে গেছেন গন্তব্যে। তাঁর সাহস আর অদম্য মনোবলকে স্যালুট।