শুরুতে দারুণ, শেষে বিপর্যয়

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ডারবানে প্রোটিয়াদের ৩৬৭ রানে আটকে দিলেও বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ছিল না সেই প্রতিরোধ। তাতে দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকালে ৪ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়ে পড়েছে সফরকারীদের ব্যাটিং। মুমিনুল-মুশফিকের ব্যর্থতার দিনে শুরু থেকে কেবল প্রান্ত আগলে রইলেন মাহমুদুল হাসান জয়। দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৯ ওভারে ৯৮ রান। সফরকারীরা এখনও পিছিয়ে ২৬৯ রানে। জয় ক্রিজে আছেন ৪৪ রানে। সঙ্গে রয়েছেন নাইটওয়াচম্যান তাসকিন (০)।

অথচ শুরুতে দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও সাদমান ইসলাম মিলে প্রোটিয়া বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছিলেন। সাদমানের মনোযোগের ঘাটতি না ঘটলে দ্বিতীয় সেশনটা নির্বিঘ্নেই কাটানো যেত। চায়ের বিরতি যাওয়ার আগে শেষ বলে হারমারের ঘূর্ণি বলে সাদমান যথাসময়ে ব্যাট নিচে নামাতে পারেননি। তাতে মিডল স্টাম্প ভেঙে যায় এই ওপেনারের। ফেরার আগে ৩৩ বলে করেছেন ৯ রান।
তার পর শান্ত-জয় মিলে ইনিংসটাকে টেনে নিতে থাকেন। দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫৩ রান যোগ করে এই জুটি। সম্ভাবনাময়ী এই জুটি ভাঙে দলীয় ৮০ রানে। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে শান্তকে বোল্ড করেছেন হারমার। তার টার্ন করা বল শান্তর ব্যাটের পাশ দিয়ে আঘাত করে স্টাম্পে। শান্ত দুই চার ও দুই ছক্কায় ৩৮ রানে ফিরেছেন। এই জুটি ভাঙার পরেই মূলত দিশেহারা হয়ে পড়েন বাকিরা।

প্রায় সেট হওয়া জুটি ভাঙার পর বিপদ আরও বাড়ে মুমিনুল হক দ্ইু ওভার পর ফিরলে। আবারও হন্তারক অফস্পিনার হারমার। তার ঘূর্ণিতে ঠিকমতো ডিফেন্স করতে পারেননি মুমিনুল। বল ব্যাটের কানায় লেগে প্যাড ছুঁয়ে জমা পরে কেগান পিটারসেনের হাতে। তাতে শূন্য রানেই ফিরেছেন অধিনায়ক।
দ্রুত উইকেট পতনের মুহূর্তে তরুণ ওপেনার জয় একপ্রান্ত আগলে থেকেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম তার যোগ্য সঙ্গী হতে পারেননি। সেই হারমারের স্পিনেই ঘায়েল হয়ে ফিরেছেন ৭ রানে। বল মুশফিকের গ্লাভস লেগে জমা পড়েছে উইকেটকিপারের কাছে। অবশ্য শুরুতে আম্পায়ার তাতে সায় দেননি। প্রোটিয়ারা রিভিউ নিলে মেলে সাফল্য। তবে এক ওভার আগে এই প্রোটিয়া স্পিনারের বলেই ক্যাচ আউট হয়েছিলেন মুশফিক। আম্পায়ার আউট দিলেও মুশফিক রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন। বাংলাদেশের পড়া ৪ উইকেটই নিয়েছেন অফস্পিনার হারমার।

এর আগে অবশ্য অসাধারণ বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩৬৭ রানে অলআউট করে সফরকারী দল। আগের সফরগুলোয় যেখানে প্রোটিয়া ব্যাটারদের ছড়ি ঘোরাতে দেখা যেত। সেখানে এই প্রথম স্বাগতিক দল বাংলাদেশের বিপক্ষে ৪০০ রানের কম করতে পারলো কোনও ইনিংসে।
অবশ্য প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩২০ রানে আটকে রাখার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের। বোলাররা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও শেষ দিকে তাদের হতাশ করেছেন প্রোটিয়াদের টেল এন্ডাররা! এক সিমন হারমার ব্যাট চালিয়ে প্রথম ইনিংসের স্কোরটাকে নিয়ে যান ৩৬৭ রানে।
খালেদের গতিতে দ্রুত দুই উইকেট পড়ার পর দিনের মূল জুটিটা গড়েছিলেন বাভুমা-মহারাজ। তাদের ৫৩ রানের জুটি ভাঙে বাভুমার বিদায়ে। মিরাজের ঘূর্ণিতে ৯৩ রানে আউট হয়ে যান প্রোটিয়া ব্যাটার। ফেরার আগে ১৯০ বলে ১২ বাউন্ডারিতে খেলে যান ঝলমলে একটি ইনিংস।

তার বিদায়ের পর আশার আলো হয়ে থাকা মহারাজও পরের বলেই আউট হয়েছেন! এবাদতের করতে আসা নতুন ওভারের প্রথম বলে ফিরে যান তিনি। বাংলাদেশি পেসারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে মহারাজ ৪ বাউন্ডারিতে করে যান ১৯ রান। লাঞ্চের আগে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়া প্রোটিয়াদের স্কোর তখন তিনশও পার হয়নি।
ঠিক এমন পরিস্থিতিতে লেজের দিকে বাংলাদেশকে হতাশ করেছেন প্রোটিয়াদের দুই টেলএন্ডার লিজাড উইলিয়ামস ও সিমন হারমার।

লাঞ্চের পর মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো এই জুটি ভাঙেন দ্বিতীয় দিন দারুণ বোলিং করা খালেদ আহমেদ। লিজাড উইলিয়ামসকে জয়ের তালুবন্দী করিয়েছেন। তার আগে এই জুটি যোগ করেছে গুরুত্বপূর্ণ ৩৪ রান। উইলিয়ামস ৩২ বল খেলে আউট হন ১২ রানে।
তার পরেও হারমার লেজের দিকে দারুণ প্রতিরোধ গড়ে স্কোরবোর্ডটাকে সাড়ে তিনশ ছাড়িয়েছেন। ডুয়ানে অলিভিয়ারকে নিয়ে যোগ করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩৫ রান।
হারমার ৩৮ রানে অপরাজিত থাকলেও দারুণ এই জুটি ভাঙে অলিভিয়ারের বিদায়ে। তাকে ১২ রানে এলবিডাব্লিউতে ফিরিয়ে প্রোটিয়াদের লেজ ছেঁটে দেন মিরাজ।

স্কোর (দ্বিতীয় দিন শেষে):

দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে: ১২১ ওভারে ৩৬৭ (এলগার ৬৭, বাভুমা ৯৩, এরউই ৪১, হারমার ৩৮*; খালেদ ৪/৯২, মিরাজ ৩/৯৪, এবাদত ২/৮৬)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে: ৪৯ ওভারে ৯৮/৪ (জয় ৪৪*, শান্ত ৩৮; হারমার ৪/৪২)।