শখের কাছে বশ মানছে স্বাস্থ্যঝুঁকি!

নগরীর যত স্ট্রিটফুড

হুমাইরা তাজরিন »

পৃথিবীব্যাপী বাঙালিরা ভোজন রসিক হিসেবে পরিচিত। কেবল তিনবেলা ভোজন নয়, খাওয়ার আগে পরেও নানা ধরণের মুখরোচক খাবারের শখ বাঙালিদের রয়েছে। নানা ধরণের এসব খাবারে রয়েছে স্বাদের বৈচিত্র্য। খাদ্যরসিকদের চাহিদার কারণে চট্টগ্রাম নগরে কয়েক বছরে এসব খাবারের ভ্রাম্যমাণ দোকান বেড়েছে বহুগুণ। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও শখের কাছে বশ মানছেন নগরবাসী। আড্ডার ফাঁকে এক প্লেইট ভেলপুরি কিংবা পেয়ারা মাখা যেন না খেলেই নয়। কেবল ভেলপুরি কিংবা পেয়ারা মাখা নয়, মোড়ে মোড়ে অলিতে গলিতে মিলছে নানান রকমের স্ট্রিট ফুড।

ফুচকা
বেশ কিছু বছর আগে থেকেই স্ট্রিট ফুড হিসেবে ফুচকার চাহিদা তুঙ্গে। শুরুতে নারীদের মধ্যে বেশ প্রিয় হয়ে উঠলেও এখন ফুচকা যেন সামগ্রিক বাঙালি অন্যতম স্ট্রিট ফুড। যার ফলে স্ট্রিট ফুডটি কেবল ভ্রাম্যমাণ দোকানে নয়, নগরীর নামী দামী হোটেল এবং গৃহিণীর রন্ধনশালায়ও স্থান করে নিয়েছে। মচমচে পুরিকে ফাটিয়ে তাতে মশলাযুক্ত সেদ্ধ আলুর পুর দিয়ে দেওয়া হয়। পুরের শুকনো ভাবে ভারসাম্য আনে তেঁতুল, লেবু, লবণ, চিনি বা গুড়ের তরল টক। পরিবেশনের সময় ধনে পাতা, কাঁচা মরিচ, ঝুরি করা সেদ্ধ ডিম ছিটিয়ে পরিবেশন করা হয় ফুচকা। পাতে পেতেই মুহূর্তে সাবাড় হয়ে যায় খাবারটি। নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে, এমনকি এমনকি অলিতে গলিতে খাবারটি এখন প্রচলিত। দাম রাখা হচ্ছে প্রতি প্লেট ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত।

ভেলপুরি
দেখতে ফুচকার মতো হলেও স্বাদে এবং উপকরণে ভিন্নতা রয়েছে ভেলপুরির। তবে ফুচকা, ভেলপুরি এবং পানিপুরি এই তিনটি স্ট্রিট ফুডই একই গোত্রের। তিনটির মধ্যে সাদৃশ্য পুর এবং পুরিতে। তবে পানিপুরতে স্বয়ং পুরের ভূমিকায় অবর্তীণ। ফুচকার পাশাপাশি ইদানিং জনপ্রিয়তা পেয়েছে ভেলপুরি। চ্যাপ্টা পুরির মধ্যখানে মশলা মিশ্রিত তেঁতুলের পুর দিয়ে উপরে শসা ছিটিয়ে পরিবেশন করা হয় ভেলপুরি। মুরাদপুর, সিআরবি, কাজি দেউরি, নিউমার্কেট, ২নম্বর গেইট , জামালখান , চকবাজারসহ প্রায় প্রতিটি মোড়ে এই খাবারটির দেখা মেলে। প্রতি প্লেট ভেলপুরির দাম রাখা হচ্ছে ১০ থেকে ১৫টাকা।

চিতই পিঠা
নগরীর সিআরবি, কাজীর দেউড়ি ও মুরাদপুর মোড়ে মিলছে চিতই পিঠা। গ্রাম বাংলার পরিচিত পিঠাটি এখন সহজলভ্য হয়েছে নগরে। কেবল শীতকালে নয় সারাবছর নগরে এই পিঠাটির দেখা মিলছে। বৃত্তাকার এই চালের গুঁড়োর পিঠাটির সাথে থাকা নানান পদের ভর্তা খাদ্যরসিকদের প্রধান আর্কষণ। যেখানে থাকে শুঁটকি ভর্তা, লাল মরিচের ভর্তা, কাঁচা মরিচের ভর্তা, সরিষা বাটা, ধনেপাতার ভর্তা। এসবের সাথে সিআরবির ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে গরুর মাংস এবং মুরগির মাংসের ঝোল আর চালতা, জলপাইসহ নানা পদের আচাঁর। প্রতি পিঠার সাইজ অনুযায়ী দাম রাখা হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা। কেবল চিতই পিঠা নয়, এসব দোকানে দেখা মেলে তেলের পিঠা এবং পুলি পিঠাও। শীতকালে ভাপা পিঠারও এসব দোকানে বেশ চাহিদা থাকে।

পেয়ারা, আনারস, আমড়া মাখা
তেলে ভাড়া খাবার এড়িয়ে যারা ভিটামিনযুক্ত ফল খেতে চান কিন্তু টক মিষ্টি ঝালের স্বাদ এড়াতে চান না তারা ছুটে যান এই মাখানো খাবারটির দিকে। দিন দিন বেশ কদর বাড়ছে এই স্ট্রিচ ফুডটির। শুরুতে পেয়ারা, আনারস, আমড়াকে কেটে নেওয়া হয়। তাতে সরিষা বাটা বা কাসুন্দি, বিট লবণ, শুকনো মরিচের গুঁড়া এবং নানা রকম আঁচার মাখিয়ে বিক্রি করা হয় এই খাবারটি। প্রতি প্লেট মাখার দাম রাখা হয় ১৫ থেকে ২০টাকা। নিউমার্কেট, রেলওয়ে স্টেশন, কাজির দেউড়ি, সিআরবি ইত্যাদি এলাকায় এই মাখাটির ভ্রাম্যমাণ দোকান দেখা যায়।

ছোলামাখা
ছোলাকে সেদ্ধ করে তাকে মশলা মাখিয়ে পেঁয়াজ মরিচ সহকারে তেলে ভাজা হয় এই খাবারটি। কখনও কখনও সেদ্ধ মটরও এর সাথে মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। শসা, টমেটো, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা ছিটিয়ে পরিবেশ করা হয় এই খাবারটি। ভোজন রসিক মানুষেরা এর সাথে শুকনো মচমচে মুড়ি মাখিয়ে খেতে ভালোবাসেন। ছোলা মুড়ি রমজানে ইফতারের প্রচলিত খাবার হলেও এখন সারাবছরই স্ট্রিট ফুড হিসেবে এই খাবারটির চাহিদা বেড়েছে। প্রতি প্লেট ছোলা মাখার দাম রাখা হয় ১০ থেকে ২০টাকা। নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ের আশাপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানের অন্যতম খাবার এটি।

জিলাপি
জিলাপি বাঙালির বেশ পরিচিত একটি মিষ্টি জাতীয় খাবার। যেকোনো শুভ কাজে জিলাপি বিতরণের প্রথা এখনও প্রচলিত আছে। তবে নগরবাসীকে আর বিতরণের অপেক্ষা করতে হয়না আজকাল। জিইসির মোড় , কাজির দেউড়ি এলাকায় সুস্বাদু জিলাপির সুনাম এখন সকলের মুখে মুখে। পুরোনো পুরু জিলাপির মেদ সারিয়ে চিকন রসালো ফুলের গড়নের কালিজিরা ছড়ানো জিলাপি এখন ভোজন রসিকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কেবল এক আধটি কিনে খেয়েই যেন চলছেনা ক্রেতাদের। কেজি দরে কিনে নেওয়া চাই। প্রতি কেজি এসব জিলাপির দাম রাখা হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। প্রতিটি জিলাপির দাম থাকছে ৫টাকা।

মালাই চা
চট্টগ্রামের মানুষের চা না খেলেই যেন নয়। চা বাগানের অপ্রতুলতা থাকলেও খোদ চা বোর্ডই চট্টগ্রামে। তবে প্রাত্যহিক চায়ে আর ভরে না মন। চায়ের স্বাদে চাই নতুনত্ব। চা প্রেমী নগরবাসীর জন্য নগরীর জামালখানের লিচুবাগান, কাজির দেউড়ি স্টেডিয়ামের কাছে পাওয়া যাচ্ছে কয়েক রকমের চা। যার মধ্যে বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে মালাই চায়ের। গরুর দুধকে চাপাতাসহকারে দীর্ঘ সময় চুলার মাধ্যমে আঁেচ রেখে তা থেকে স্বর তৈরি করা হয়। সেই স্বরে তেজপাতা ,এলাচির মতো মশলা এবং চিনি মেশানো হয়। এসব চা মাটির কাপে পরিবেশন করা হয়। প্রতি কাপ চায়ের মূল্য রাখা হয় ১২ থেকে ২০টাকা।