লোকসানের শঙ্কায় খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

‘মোখা’

রাজীব শর্মা »

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখার’ কারণে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে ব্যবসায়ীদের আরও ভাবিয়ে তুলেছে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং, খালে দেওয়া বাঁধ অপসারণ না করা ও খালের মুখে স্লুইস গেইটের অপ্রস্ততা। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখার’ প্রভাবে ১২ থেকে ১৩ ফুট পানির জলোচ্ছাসের আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই ও কোরবানীগঞ্জ এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায় অনেক ব্যবসায়ীরা গুদাম থেকে মালামাল সরাতে ব্যস্ত। আবার যেসব ব্যবসায়ীদের ওই এলাকায় নির্দিষ্ট কোনো গুদাম নেই, তাদের অনেকে ট্রাকে মালামাল লোড করতে দেখা যায়।

চাক্তাই চা পাতা আড়দতদার ও পাইকারি বিক্রেতা শাহী দরবার টি হাউসের মালিক ব্যবসায়ী মো. মুন্না বলেন, ‘সিত্রাংয়ের সময় আমরা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছি না, এতো চা পাতা নিয়ে কয় যাবো। তবে সব চা পাতা সরানো সম্ভব না।’

চিনি বিক্রেতা নূরুল ইসলাম ব্রাদার্সের দায়িত্বরত মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মালামাল সরাবো তেমন কোনো স্থান নেই। যার ফলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে যেভাবে পানি হওয়ার বার্তা দিচ্ছে, তা হলে বড় লোকসানে পড়বো নিশ্চিত।’

নিউ মদিনা বাণিজ্যালয়ের সুবীর দাশ বলেন, ‘পেঁয়াজ, আদা রসুন এসব পচনশীল পণ্য। এসব আর গুদামজাত করে রাখার জিনিস না। পানি বেশি হলে আর যা হয় মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

আবুল বশর অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. আবুল বশর সওদাগর বলেন, ‘এখনো ২০০ থেকে ৩০০ বস্তা পেঁয়াজ, রসুন রয়ে গেছে। সবাই মালামাল সরানোর নির্দেশ দিয়ে গেলেও পচনশীল পণ্য তাই কোনো আড়তদার তা রাখতে চায় না। যেভাবে খবর শুনছি, পানি বেশি হলে বড় লোকসান হবে।’

বিভিন্ন মসলাজাত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস এ ট্রের্ডাসের মালিক মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমাদের কোনো অতিরিক্ত গুদাম নেই। যার ফলে কিছু করার নেই।’
অন্যদিকে মাল সরানোর কাজে কোন কোন ব্যবসায়ী ব্যবহার করছে তাদের নিজস্ব ট্রাক বা ভাড়ায় চালিত ট্রাক। গুদাম না থাকাতেই ভাড়া করা ট্রাকই তাদের একমাত্র সম্বল। এমন এক ট্রাকে মজুদ করে রাখছে ‘যুথিকা ট্রেডার্স’ নামে একটি ডাল ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠান।

জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত বিশ্বদাশ গুপ্ত বলেন, ‘বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে ১০ থেকে ১২ ফুট পানি হবে। আমাদের এ স্থানের বাইরে রাখার মত কোনো গুদাম নেই। সব মালামাল রক্ষায় সম্ভব না হলেও কিছু মালামাল ট্রাকে মজুদ করা হচ্ছে।’

খাতুনগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের খালগুলোর মাধ্যমে নৌযোগে দেশের বিভিন্নস্থানের মালামাল লোড করা হয়। কিন্তু এ খালে একটি স্লুইস গেট করার সময় স্থানীয়দের সঙ্গে বসা উচিত ছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনদের। কিন্তু তারা তা করেননি। এমনকি এখনও পর্যন্ত খালের বাঁধের মুখে মাটিতে ভরাট। যার ফলে জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকবে। খাল যখন আছে পানিও উঠবে। কিন্তু সেই পানি যখন তার গতিতে নামতে না পেরে দুই-চার-পাঁচঘণ্টা স্থিতি অবস্থায় থাকে। তখনই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জলাবদ্ধতার ক্ষতিতে পড়েন। এর দায়ভার তো কেউ নেন না।’

অন্যদিকে হামিদুল্লাহ মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, ‘পেঁয়াজ, রসুন ও আদা পচনশীল পণ্য। পানি লাগলেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পচন ধরবে। তবুও ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য রক্ষার চেষ্টা করছে।