লবণাক্ত ওয়াসার পানি

চট্টগ্রাম মহানগরীতে ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ ৭৮ হাজার ৫৪২টি। আর বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। ৭৭০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে সংস্থাটি নগরীতে পানি সরবরাহ করে। বেশির ভাগ লাইন পুরোনো হওয়ার কারণে এমনিতেই সংকটে থাকতে হয় গ্রাহকদের। লাইনে লিকেজ বা ছিদ্রের কারণে পানি নষ্ট হয়। এখন সংকট আরও প্রকট হয়েছে। নতুন সংকট যুক্ত হয়েছে ওয়াসায়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ করা পানি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন নগরবাসী। বিভিন্ন এলাকায় দিনের পর দিন পানি আসছে না। আবার যেটুকু আসছে, লবণাক্ততার কারণে সেটুকুও মুখে তোলার জো নেই। অনেকেই পানি কিনে এনে ব্যবহার করছেন। কেনা পানি পান করছেন। আবার কেউ দূরদূরান্তের পুকুর ও গভীর নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করে আনছেন। চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পান করার মতো অবস্থা নেই। পানিতে লবণের মাত্রা এত বেশি যে তা পান করে মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন।
ওয়াসা বলছে কাপ্তাই হ্রদ থেকে পানি ছাড়া কমিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। পানি কম ছাড়ায় হালদা নদীতে মিঠা পানির পরিমাণ কমে গেছে। হালদায় উজানের পানির চাপ কমে যাওয়ায় কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের লবণাক্ত পানি হালদায় প্রবেশ করছে। হালদা নদীর যে পয়েন্ট থেকে মোহরা প্রকল্পের পানি সংগ্রহ করা হয় সেখানে বর্তমানে লবণের পরিমাণ প্রতি লিটারে ১৭০০ মিলিগ্রাম। স্বাভাবিক সময়ে এই লবণের পরিমাণ থাকে প্রতি লিটারে ১০০ থেকে ৩০০ মিলিগ্রাম। কর্ণফুলী নদীতে শেওলা জমার কারণে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার থেকে এখন আসছে ২০ কোটি লিটারের কম পানি। পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণেও পানি সরবরাহে সমস্যা তৈরি হয়েছে। মুষলধারে বৃষ্টি না হওয়া পর্যস্ত এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
ওয়াসার পানি যে পরিমাণ লবণাক্ত তা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিগ্রাম/লিটার লবণাক্ততা অবশ্যই মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশু এবং বৃদ্ধ মানুষের জন্য। এছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের লবণাক্ত পানি ক্ষতি করবে। লবণাক্ত পানি মানুষের খাদ্য হজমেও সমস্য সৃষ্টি করবে।
ওয়াসা নদীর পানি লবণ মুক্ত করে না, মিনিমাইজ করে। তবে তারা পানি জীবানুমুক্ত করে সরবরাহ করে থকে। শুষ্ক মৌসুমের জন্য ওয়াসা কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি থাকা দরকার। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসায়। ব্যয়বহুল হলেও পানির লবণাক্ততা দূর করার প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি যুক্ত করা একান্তভাবেই জরুরি চট্টগ্রাম ওয়াসার জন্য।
চট্টগ্রামে দৈনিক পানির চাহিদা ৪৬ থেকে ৪৮ কোটি লিটার। বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ৪টি পানি শোধানাগার প্রকল্প থেকে সরবরাহ করা হয় প্রায় ৪৭ কোটি লিটার পানি। আরও একটি পানি শোধানাগার প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে।
আমরা প্রত্যাশা করি নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে নগরবাসীকে স্বস্তি দেবে ওয়াসা। চলমান সমস্যার সমাধান ওয়াসাকেই করতে হবে।