লকডাউনে প্রশাসনের কঠোর বার্তা : মৃত্যু ও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে শঙ্কা

করোনা সংক্রমণ রোধে সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনের প্রথমদিনে গতকাল প্রশাসনের ব্যাপক তৎপরতা দেখা গেছে। সরকারি বিধিনিষেধ প্রতিপালনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভূমিকা পরিস্থিতি অনুযায়ী যথার্থ মনে হয়েছে। বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি রোধে জনগণের সচেতনতা এবং প্রশাসনের যথাযথ দায়িত্ব পালনের বিকল্প নেই। গত বৃহস্পতিবার করোনায় ১৪৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, সংক্রমণ ৮ হাজারের বেশি। চট্টগ্রামে ঐ দিনে রেকর্ড শনাক্ত ৫৫২ জন। খুলনা, রাজশাহী বিভাগে মৃত্যু বেশি। আর সংক্রমণ গত ২ মাসে দেশব্যাপী ছড়িয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে মৃত্যু ও সংক্রমণ পরিস্থিতি এবং বর্তমানে যে হারে সারা দেশে পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হচ্ছে তাতে বিশেষজ্ঞরা একে করোনার তৃতীয় ঢেউ বলছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন মুখপাত্র প্রতিদিন ২১ থেকে ২৩ শতাংশ সংক্রমণের কথা বলছেন। লকডাউন ঘোষণার কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে যেভাবে মানুষ গ্রামে গেছে তারা সাবধানতা অবলম্বন না করে যত্রতত্র ঘুরছেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে করোনা উপসর্গ নিয়ে ঢাকায়ও ঢুকেছেন, কোনোরূপ পর্যবেক্ষণ নেই।
এতে গ্রামেÑশহরে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়েছে। আর এ ধরণের পরিস্থিতি রুখতে কেবল প্রশাসনিক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। কমিউনিটি পর্যায়ে প্রচারমূলক ও প্রতিরোধ ব্যবস্থায় জনগণের সচেতন অংশকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া বিকল্প নেই অথচ এ কাজটি করা হচ্ছে না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনকে জনগণের সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় রাজধানী ও জেলা উপজেলার হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে অথচ আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে একেবারেই অপ্রতুল, করোনা মহামারির এই দেড় বছরে স্বাস্থ্য অধিদফতর চাহিদা ও প্রয়োজন যথাযথভাবে অনুধাবন করতে পারেনি। আইসিইউ ও অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ৭ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল বগুড়ায় হাইÑফ্লোÑন্যাজাল ক্যানেলার সংকটে রোগী মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর সময়ের আহ্বানে সাড়া দিতে সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। হাসপাতালের মৃত্যুর পরিসংখ্যান ছাড়াও জেলা উপজেলার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুও আছে, তার খবর যথাযথভাবে আসছেনা।
করোনা উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন, আইসোলেশন থাকতে হবেÑ এ ধারণা জনগণকে দেওয়া হচ্ছে না যথাযথ প্রচারের অভাবে। নগরে, গ্রামে কোথাও স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম নেই এই পরিস্থিতিতে, এতে করোনা পরিস্থিতি আরো মারাত্মক হয়ে উঠবে। সামনে ঈদÑউলÑআজহা, লকডাউন উঠে যাবার পর জীবনÑজীবিকা কিভাবে সামাল দেয়া যাবে সে ব্যাপারে পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন।
করোনা থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও টিকা নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই, এ জন্য টিকাদান কর্মসূচি কোনভাবেই যাতে ব্যাহত না হয় সে জন্য টিকা সংগ্রহে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।
চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ই ইউ,ভারত ও কোভ্যাক্সসহ সকল উৎস থেকে টিকা সংগ্রহে সচেষ্ট হতে হবে। করোনা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের সাথে যে সকল মন্ত্রণালয় জড়িত তাদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে জাতীয়ভাবে মন্ত্রী, বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যবিদ, আমলা, রাজনীতিক, সংসদ সদস্য নিয়ে টাস্কফোর্স কিংবা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা এ পরিস্থিতিতে খুবই প্রয়োজন।