রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা হোক

ফাইল ছবি

মিয়ানমার পরিস্থিতি দিনদিন জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠছে। দেশটির বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপের সাথে সীমান্তবর্তী প্রদেশে সামরিক সরকারের লড়াই এখন তুঙ্গে। এই সংঘাতের আঁচ মিয়ানমারের সীমান্ত ছাপিয়ে বাংলাদেশেও লাগছে গত বেশ কয়েকদিন ধরে। বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গুলি ও মর্টারের শব্দে প্রকম্পিত। এখানে আরাকান আর্মির সাথে তীব্র সংঘাত হচ্ছে মিয়ানমার সৈন্যদের। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরাও সতর্ক অবস্থানে আছে। তবে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে যারা বসবাস করছেন তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে।
এর ঢেউ এসে পড়েছে বাংলাদেশেও। নিজ জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যেতে কক্সবাজারের উখিয়া আশ্রয়শিবিরে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। গত শুক্রবার সকালে উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে ওই সমাবেশের আয়োজন করে তারা। সমাবেশ থেকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। অন্যথায় একজোট হয়ে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয় রোহিঙ্গা নেতারা। সমাবেশে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গা হেড মাঝি, সাবমাঝি, ধর্মীয় নেতা ও নারীরা অংশ নেশ। এ সময় ‘অনেক হয়েছে আর নয়; এবার স্বদেশে ফিরতে চাই’ বলে স্লোগান দিতে শোনা যায়।
এই সমাবেশে যোগদানকারী টেকনাফের শালবাগান ২৬ নম্বর আশ্রয়শিবিরের মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘এক বছর, দুই বছর করে সাত বছর পার করছি পরদেশে। এখানে আর থাকতে চাই না। নিজেদের অধিকার নিয়ে স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই।’ রোহিঙ্গা সংগঠক সৈয়দ উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারের আরাকানে আমাদের আত্মীয়স্বজন, মা-বাবা, ভাই-বোন আছে। তাদের ওপর অনেক নির্যাতন হচ্ছে। তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, তারা যেন কোনো দিনও দেশ ছেড়ে চলে না আসে। জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় একজোট হয়ে আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাব।
রাখাইন অঞ্চলে আরাকান আর্মি যেভাবে শক্তি বাড়িয়ে বিভিন্ন এলাকা দখল করে নিয়েছে তাতে বিচলিত হয়ে পড়েছে মিয়ানমার সরকার। এখন থেকে তিন বছর আগে মিয়ানমারে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসিকে হটিয়ে ক্ষমতা নেয় সামরিক সরকার। এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জান্তা বিরোধী প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ জোরালো হতে থাকে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একই সাথে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন তাদের শক্তি আরো বাড়িয়ে তোলে। এসব গ্রুপও জান্তা সরকারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করে। তিন বছরের মাথায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির শান ও রাখাইন প্রদেশে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত, তারা এ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ কী তা চট করে বলা যাচ্ছে না। তবে আগের মতো সারাদেশে সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ যে থাকছে না তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এই পরিবর্তনের সময়ে রোহিঙ্গাদের অবস্থা কী হবে তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সুদৃষ্টি অবশ্যই কাম্য। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সে সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার যে প্রত্যয় রোহিঙ্গারা ব্যক্ত করেছে তা যেন কোনো অদৃশ্য শক্তির কারণে স্তিমিত হয়ে না যায়। তাদের দেশে ফেরার আকাক্সক্ষা যেন পূর্ণ হয়।