রাতারাতি ডাবল সেঞ্চুরি পেঁয়াজে

রাজিব শর্মা »

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই নগরীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে অস্থির হয়ে উঠছে। রাতারাতি এ পণ্যের দাম ছাড়িয়েছে প্রায় ডাবল সেঞ্চুরি। অথচ পাকিস্তান ও চীনের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে নিয়মিত। শনিবার নগরীর পাইকারি আড়ত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও খুচরা বাজারগুলোতে এমন চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি ভারতের আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। খুচরা বাজারগুলোতেও দেখা যায় দাম বৃদ্ধির চিত্র।

রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাট কাঁচাবাজারসহ চাক্তাইয়ের খুচরা পেঁয়াজের দোকানগুলোতে বিক্রি হয়েছে মানভেদে কেজিপ্রতি ২১০ থেকে ২২৫ টাকা দরে। এতে পেঁয়াজের দর হঠাৎ চড়া হওয়ায় বাজার বিমুখ হয়ে ফিরছেন ক্রেতারা। বাজারে এমন পরিস্তিতিতে ক্রেতারা দুষছেন খুচরা ও পাইকারদের আর পাইকাররা দুষছেন মধ্যস্বত্ব কারবারিদেরকে।

বকসিরহাট কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা শিক্ষিকা রোকসানা আক্তার বলেন, ভারত যদি তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ রাখতে কোন সিদ্ধান্ত নেয় তার প্রভাব সহজে এখানে পড়ে। বৃহস্পতিবার তারা প্রস্তাব দিলে আজ শনিবার সকালেই খুচরা বাজারে ২২০ টাকা কেজি দর হয়ে গেলো। তাহলে এতদিন ধরে বাজারে থাকা পেঁয়াজগুলোর দাম বাড়লো কেন এমন প্রশ্ন করেন তিনি।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য মতে, গত বছর এ দিনে দেশীয় চাষের ও আমদানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল  ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। যা এক বছরের ব্যবধানে প্রায় তিনগুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়।

বকসিরহাটের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, শুক্রবার থেকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পাইকারিতে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। ফলে বেশি দরে কেনাতেই আমাদেরকে ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। তারা যদি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায় আমাদের করার কিছু নেই।

এদিকে, বাজারে থাকা পুরোনো পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের অনেকেই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

চাক্তাইয়ের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. ফোরকান বলেন, ‘আমাদের কাছে যা পেঁয়াজ ছিল তা শুক্রবারে ১১৫ টাকায় বিক্রি করেছি। শনিবারে সকালে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এসে দেখছি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে পাইকাররা বিক্রি করছে। এসব বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছে মধ্যস্বত্ব কারবারিরা। যা আগে দর নির্ধারণ করে দেয় তারা। আর ব্যবসায়ীরা হলেন কমিশন এজেন্ট। তাদেরকে যে দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয় সে দরে বিক্রি করে।

হামিদউল্লাহ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিছ বলেন, খাতুনগঞ্জের বাজারে কোনো পেঁয়াজ নেই। ফলে এখানে ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত কোনো দরও নেই। ব্যবসায়ীদের যার থেকে যা আছে তা বিক্রি করছে। এভাবে আরো ১০ থেকে ১৫ দিন যাবে। দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া অন্যদেশ থেকে আমদানির পেঁয়াজ আসতে কমপক্ষে একমাসের মতো সময় লাগবে বলে জানান এ ব্যবসায়ী।

মূলত ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশটির সরকার আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের বাণিজ্য অধিদপ্তর দেয়া এক আদেশে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর আগে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য প্রতি টন নূন্যতম ৮০০ ডলার বেঁধে দিয়েছিল ভারত। সে নির্দেশ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর ছিল। তবে তার আগেই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিল দেশটি।

অন্যদিকে পাকিস্তান ও চীনের বাজারে পেঁয়াজ আমদানি চালু রয়েছে বলে জানান  চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপপরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম। তিনি বলেন, ‘গত জুলাই মাস থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৫১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ চীন ও পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে চীন থেকে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৯১ মেট্রিক টন। পাকিস্তান থেকে আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৬০ মেট্রিক টন  পেঁয়াজ। আপাতত এই দুই দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি চালু রয়েছে।’