যোগান ভালো তবুও দাম চড়া

নিত্যপণ্য

রাজিব শর্মা »

সরবরাহে কোন ধরনের জটিলতা, আমদানি সংকট, যোগানের সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও দিন দিন বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। এতে বাজার করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। নিয়মিত বাজার তদারকির অভাবে সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন ভোক্তারা ।

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর রেয়াজউদ্দিন ও চকবাজারসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে আদা, রসুন, হলুদ ধনিয়াসহ প্রায় সকল মসলাজাত পণ্যের দাম বেড়ে ডাবল সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। তাছাড়া সমুদ্রের মাছ ধরা স্বাভাবিক থাকার পাশাপাশি বাজারে পর্যাপ্ত মাছ থাকার পরও মাছের দাম বেড়েছে। কেজি প্রতি ২০০ টাকার নিচে কোন ধরনের মাছ মিলছে না। ব্রয়লার মুরগির বাজারও লাগামহীন। ঊর্ধ্বমুখী শাক-সবজি, ডিম ও মাংসসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম। এতে বাজারে এসে বেশ বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা।

হাজারি গলি থেকে বকসিরহাটে বাজার করতে আসা রাজেশ বিশ্বাস নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজার তদারকিতে প্রশাসনের দুর্বলতা রয়েছে। ফলে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একেকদিন একেকটি পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ীরা। এসব অসাধু ব্যবসায়ী ঠেকাতে হলে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অভিযানের প্রয়োজন রয়েছে ।’

আরও পড়ুন > বাজার সিন্ডিকেট: এবার যুক্ত হলো আলু

নালাপাড়া থেকে রেয়াজউদ্দিন বাজারে আসা তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজার বেশ চড়া। কোন ধরনের পণ্যের দাম ২০০ টাকার নিচে নেই। ১৪০ টাকার মুরগি ১৮০ টাকা, ১১০ টাকার ডিম ১৫০ টাকা, মাছ তো আমাদের মতো সাধারণদের নাগালের বাইরে। বাজার এখন যার যেমন ইচ্ছে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।’

মসলার বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বেশি বেড়েছে আদা, রসুন, হলুদ ও পেঁয়াজের দাম। আমদানি করা আদা, রসুন, হলুদ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে কেজিপ্রতি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, যেসব পণ্য গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। সেই হিসেবে সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর এসব পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দামও। গত সপ্তাহে যে মানের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, তা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রেয়াজউদ্দিন বাজারের মসলা ব্যবসায়ী মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমদানি জটিলতায় পাইকাররা দাম বাড়াচ্ছে, এতে আমাদের কেও বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

ঊর্ধ্বমুখী সব ধরনের মাছের দাম। নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা চাষের পাঙাশের দামও চড়া। এ মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। আর ইলিশ, রূপচাদা, লাক্ষা, কোরাল, মাইট্টার মতো সমুদ্রের মাছ এখন ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।

রিকশাচালক শাকিল বলেন, ‘আগে এক কেজি চাষের পাঙাশের দাম ছিল ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। কিন্তু এ মাছ এখন হয়েছে ২২০ টাকা। সীমিত আয়ে মাছ আর কেনা হয় না।’

বাজারে আকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। তাছাড়া প্রতি কেজি কোরাল, আইড়, রূপচাদা, ছোট লাক্ষা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। আর প্রতি কেজি রুই ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা ৩৮০ থেকে ৪৩০ টাকা, চিংড়ি সাইজভেদে ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা ও তেলাপিয়া ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা।

মাংসের বাজারও চড়া। প্রশাসনের তদারকিতে কিছুদিন কমতির দিকে থাকলেও গতকাল বাজারে আবারো ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই ব্রয়লার মুরগির বাজার। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও।

সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ব্রয়লার মুরগি আকারভেদে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৯০ থেকে ৩৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮৫ থেকে ৩০০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন পর্যায়ে মুরগির কিছুটা সংকট থাকাতে বাজারে হঠাৎ করে কমে গেছে মুরগির সরবরাহ; এ কারণে গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহ দাম কিছুটা বাড়তি।

এদিকে, গরু ও খাসির মাংসের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা। আর প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

বাজারে প্রতি ডজন লাল ডিম ১৫০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২১০ টাকায় উপরে।

অন্যদিকে শাকসবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়ে গেছে সব ধরনের শাক-সবজির। বাজারে কোন ধরনের ঘাটতি দেখা না গেলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ ঘাটতি ও সংকটের কারণে সবজির দাম বাড়ছে। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৭০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১১০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, ভারতীয় টমেটো ২৮০ টাকা আর ঢেঁড়স ৬০ টাকা।

এছাড়া প্রতি আঁটি পুঁইশাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ফুলকপি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৬৫ টাকা, আলু ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কয়েকমাস ধরে ওঠানামা করা কাঁচা মরিচের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

রেয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি বিক্রেতা লোকমান জানান, কয়েকদিন ধরে নরসিংদী, ঠাঁকুরগাও, সিরাজগঞ্জ থেকে সবজি আসছে না। এ সংকটের কারণে দাম বাড়তি। তবে কাঁচা মরিচের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় দাম কমেছে।