যত্রতত্র রেস্তোরাঁ ও অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় কৃপণতা

দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খোলা জনপরিসর নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেস্তোরাঁ শিল্পের বিকাশ হওয়ার পেছনে এটা একটা অন্যতম কারণ। গোছালো পরিবেশে কিছুটা সময় বন্ধু, পরিজনদের সঙ্গে দেখা করার, আড্ডা দেওয়ার, কথা বলার বা গেট টুগেদারের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। আবার অনেকের আর্থিক সামর্থ্য কিংবা ব্যয় করার অভ্যস্ততা বাড়ায় নতুন ধরনের রেস্তোরাঁর শিল্প দ্রুত বিকাশ হচ্ছে।
ফলে যত্রতত্র রেস্তোরাঁ ব্যবসা জমজমাট হচ্ছে নগরীতে। রেস্তোরাঁর জন্য আলাদাভাবে নির্মিত নয় এমন ভবনেই এ ধরনের ব্যবসা গড়ে তোলা হচ্ছে। সুন্দর করে সাজানো গোছানো সব রেস্টুরেন্ট। আয়োজনের কমতি নেই, কমতি কেবল নিরাপত্তার। সেখানেই সব কৃপণতা। যারা ব্যবসা করেন, তাদের সবাইকে অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা দরকার।
রাজধানীর বেইলি রোডের সাততলা ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ভবনটিতে অফিস করার অনুমতি ছিল। কিন্তু অফিস না করে এখানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টসহ দোকান করা হয়েছে। আগুনে পুড়ে যাওয়া রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কজি কটেজ নামের ভবনটির পুরোটা জুড়েই ছিল খাবার ও কাপড়ের দোকান। ভবনটির সামনেসহ সিঁড়িতে রাখা ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার।
সিঁড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার থাকার কারণে পুরো সিঁড়িটি ‘অগ্নিচুল্লির’ মতো হয়ে গিয়েছিল। সে কারণেই কেউ সিঁড়ি ব্যবহার করে নামতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, যারা মারা গেছে তাদের বেশিরভাগ আগুনে পুড়ে নয়, বরং ধোঁয়ার কারণে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। এর আগে তারা অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। এছাড়া সিঁড়ি দিয়ে একসঙ্গে তিনজনের বেশি যাতায়াত করা যেত না বলেও স্থানীয়রা জানান।
ভবনটিতে আগুন লাগে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে। এখন পর্যন্ত আগুনে ৪৬ জনের করুণ মৃত্যু ঘটেছে। ১২ জন চিকিৎসাধীন। তাঁরা কেউ শঙ্কামুক্ত নন।
পুড়ে কয়লা হওয়া কিংবা ধোয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুর অপেক্ষার অবসান হবে কবে? এই ধরনের বেদনাদায়ক ও অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করতে না পারলে বার বারই প্রাণ যাবে সাধারণ মানুষের।