মেট্রোরেলের রুট : বাড়াতে হবে শহর

বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, হাটহাজারী পটিয়া, আনোয়ারাকে যুক্ত করতে হবে

ভূঁইয়া নজরুল »

শুধু শহর নয়, শহরের আশপাশের উপজেলা সদরের সাথে সংযোগ করে মেট্রোরেলের রুট নির্ধারণ করতে হবে। এতে নগর যেমন সম্প্রসারিত হবে তেমনি উপজেলা সদরগুলোও সিটি সেন্টার হিসেবে গড়ে উঠবে। নগরীতে ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের রুট অভিন্ন হওয়ায় একই সড়কেমেট্রোরেলের রুট সম্ভব নয়। তাই নগর সম্প্রসারণে বিকল্প রুটে যেতেই হবে বলে নগরপরিকল্পনাবিদ, ব্যবসায়ী ও শিক্ষাবিদদের অভিমত।

মেট্রোরেল নিয়ে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে একেখান, কালুরঘাট, নিমতলা বিশ্বরোড ও শাহ আমানত সেতুকে প্রান্তীয় এলাকা বিবেচনা করে শহরের ভেতরে তিনটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এখন গভীর একটি স্টাডি প্রয়োজন বলে জানান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ শাহীনুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘শহরকে সম্প্রসারণ করতে মেট্রোরেলের বিকল্প নেই। ফ্লাইওভার বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের আগে মেট্রোরেল করা গেলে শহর সম্প্রসারণ আরো আগে হতো। তাই এখন পুরো শহর নিয়ে একটি স্টাডি প্রয়োজন। সেই স্টাডি বিদ্যমান ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে সামঞ্জস্য করে মেট্রোরেলের রুট নির্মাণের প্রস্তাবনা দেবে।’

সিডিএ’র ২০০৮ সালের ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানেও হাটহাজারী, আনোয়ারা, পটিয়া ও সীতাকু-কে গ্রোথ সেন্টার গড়ে তোলার প্রস্তাবনা করা হয়। এখন নগর সম্প্রসারণে মেট্রোরেলের রুট সেসব গ্রোথ সেন্টারের সাথে যুক্ত করা যায়।

এবিষয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহি প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা শুধু একটি রুটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছি। মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য বাকি রুটগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। একইসাথে নগরকে বিভিন্ন উপজেলার সাথে সংযোগ করা যেতে পারে।’

মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রয়োজন

মেট্রোরেলকে অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির হাতিয়ার উল্লেখ করে চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘মেট্রোরেলের সাথে অবশ্যই মিরসরাইকে যুক্ত করা প্রয়োজন। আর তা করা গেলে চট্টগ্রাম নগর বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সাথে যুক্ত হবে। এতে বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।’

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বর্তমানে ইউএসটিসির উপাচার্য প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের সাথে বিমানবন্দর, কর্ণফুলী টানেল ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের সংযোগ রাখা যেতে পারে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতি পাবে।’

শহরের বাইরের এলাকা পরিকল্পনায় আনতে হবে

চট্টগ্রাম মহানগরীর মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএ’র উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ঈসা আনসারী বলেন, ‘শুধু শহরকে নিয়ে মেট্রোরেলের পরিকল্পনা করলে এর সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে। শহরের বাইরের এলাকাগুলোকে (মিরসরাই, সীতাকু-, হাটহাজারী, আনোয়ারা ও পটিয়া) নিয়ে মেট্রোরেলের রুট পরিকল্পনা করতে হবে। তাহলে গ্রোথ সেন্টারগুলো সমৃদ্ধ হবে এবং সম্প্রসারিত হবে নগর।’

তিনি আরো বলেন,‘তবে কোন উপজেলা আগে যুক্ত হবে তা নিয়ে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করতে হবে। সেই অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে এসব রুট।’

মেট্রোরেলের রুট প্রসঙ্গে বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ‘সবার আগে স্টাডি দরকার। একটি গভীর স্টাডি আমাদের বলে দেবে কোন কোন রুটে মেট্রোরেল নির্মাণ করতে হবে। তাই স্টাডির আগে এখনই কিছু বলা যাবে না।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার একনেক সভায় চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য প্রকল্প তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  যেহেতু চট্টগ্রামের প্রধান সড়কে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভার রয়েছে তাই মেট্রোরেলের রুট কী হবে তা নিয়ে ইতোমধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এর আগে সিটি কর্পোরেশন ২০১৯ সালে মেট্রোরেলের রুট নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডিতে নগরীর ভেতরে তিনটি রুট নির্ধারণ করেছিল। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগর ঘিরে মিরসরাইতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, হালিশহর সাগরপাড়ে বে টার্মিনাল, মহেশখালী মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে। কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের মাধ্যমে পতেঙ্গা প্রান্ত দিয়ে আনোয়ারা অংশের যোগাযোগ সহজ হয়ে যাচ্ছে। এতে দ্রুত সম্প্রসারণ হবে নগর।