মেইল থেকে আন্তঃনগরে চট্টলা এক্সপ্রেস

রেলওয়েতে প্রথম #

প্রথম শ্রেণির পাশাপাশি রয়েছে শোভন চেয়ার ও সুলভ শ্রেণির ৫৮০ আসন#

 

ভূঁইয়া নজরুল :

১০ বছর পর মেইল থেকে আন্ত:নগর ট্রেনে রূপ নিল চট্টলা এক্সপ্রেস। আর এই রূপান্তরের মাধ্যমে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে আন্ত:নগর ট্রেনের সংখ্যা বেড়ে ছয়টি হলো। গত বৃহস্পতিবার থেকে নতুন রূপে চালু হয়েছে এই ট্রেনটি। চট্টলায় প্রথম শেণির ২৭টি আসন ছাড়াও শোভন চেয়ার ও সুলভ শ্রেণির ৫৫৩টি আসন রয়েছে। মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ছয়দিন এটি চলাচল করবে।

মেইল ট্রেন থেকে আন্ত:নগর ট্রেনে রূপান্তরের এই মাধ্যমকে রেলওয়ের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক সর্দার সাহাদাত আলী। তিনি বলেন, ‘এর আগে রেলওয়েতে বিভিন্ন ট্রেন সময়ের হিসেবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তখন নতুন নামে নতুন ট্রেন এসেছে। কিন্তু চট্টলা এক্সপ্রেস একমাত্র ট্রেন যা আপগ্রেডেশন হয়েছে। মেইল ট্রেন থেকে তা এখন আন্ত:নগরে রূপান্তর রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, আন্ত:নগর ট্রেনে নামাজের স্থান, খাবার গাড়ি, এক বগি থেকে আরেক বগিতে চলাচলের সুযোগ থাকে। আগে এই ট্রেনে এগুলো ছিল না। এখন নতুন বগি সংযোজনের মাধ্যমে তা করা হয়েছে। তবে এই ট্রেনটিতে আগেও কম্পিউটার পদ্ধতির মাধ্যমে টিকেট বিক্রি হতো এবং চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে সব স্টেশন থামতো না।

ট্রেনটি সম্পর্কে জানা যায়, রেলওয়ের বহরে চট্টলা ট্রেনটি যুক্ত হয় ২০১১ সালের শুরুতে। মেইল ট্রেন হিসেবে এতোদিন ট্রেনটি চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে চলাচল করলেও এর টিকেট সিস্টেম ছিল আন্ত:নগর ট্রেনের মতো। প্রথম শ্রেণি ছাড়াও শোভন ও সুলভ সিট ছিল ট্রেনটিতে। আর বগিগুলো ছিল চট্টগ্রাম ও ঢাকা মেইলের। ট্রেনটির নিজস্ব কোনো বগি ছিল না। অন্য ট্রেনের বগি দিয়ে এটি চলাচল করতো।

এবিষয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছার পর সেই ট্রেনের বগিগুলোকে খুলে চট্টলা ট্রেনের বগি তৈরি করা হতো। ১২টি বগি দিয়ে তৈরি করা হতো ট্রেনটি। তারপর ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতো। ঢাকায় পৌঁছার পর এই ট্রেনের বগিগুলোকে খুলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী মেইল ট্রেনে লাগানো হতো। একইভাবে দুই প্রান্তে দুই ট্রেনের বগি খুলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে চট্টলা এক্সপ্রেস নামে ট্রেনটি চলাচল করছিল ২০১০  থেকে। এতে কোনোদিন যদি ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম মেইল চট্টগ্রামে পৌঁছাতে বিলম্ব হতো তাহলে চট্টলা ট্রেন ছাড়তেও বিলম্ব হতো। এখন আর এই ঝামেলা থাকবে না বলে জানান পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশ গুপ্ত। তিনি বলেন,‘ এখন ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম মেইল ট্রেনের বগি খুলে চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য বগি তৈরি করতে হবে না। এখন এই ট্রেনের জন্য আলাদা বগি দেয়া হয়েছে।’

আলাদা বগি কোথা থেকে দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে চলাচলকারী পাহাড়িকা ও উদয়নে লাল সবুজের বগি লাগানো হয়েছে। কিন্তু এই ট্রেন দুটিতে আগে যেসব বগি যুক্ত ছিল সেসব বগি চট্টলা ট্রেনে যুক্ত করা হয়েছে। এতে ট্রেনটি আন্ত:নগর ট্রেনে মর্যাদা পেল এবং আসনেও নতুনত্ব আনা হয়েছে।

কিন্তু শুধু কোচ বদলের কারণেই কি মেইল থেকে আন্ত:নগর ট্রেনে রূপান্তর হয়েছে? এমন প্রশ্ন করা হলে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আনসার আলী বলেন,‘আন্ত:নগর ট্রেনের প্রধান শর্ত হলো এক বগি থেকে আরেক বগিতে যাওয়ার রাস্তা থাকতে হবে। এতোদিন মেইল ট্রেনের বগি থাকাতে সেই সুযোগ ছিল না। এখন পাহাড়িকা ও উদয়নের বগি সংযুক্তের মাধ্যমে সেই সুযোগ হয়েছে এবং ট্রেনটিও আন্ত:নগর মর্যাদা পেয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, একইসাথে আসন বিন্যাসেও আমরা পরিবর্তন এনেছি। আগে এই ট্রেনে শোভন চেয়ার ছিল না। প্রথম শ্রেণির একটি বগির পাশাপাশি শোভন ও সুলভ শ্রেণির আসন ছিল। এখন প্রথম শ্রেণির পাশাপাশি শোভন ও শোভন চেয়ার যুক্ত করা হয়েছে। ট্রেনের ৫৮০টি আসনের মধ্যে  ২৭টি আসন রয়েছে প্রথম শ্রেণির এবং বাকি আসনগুলো শোভন ও শোভন চেয়ারের।

এদিকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে চট্টলা ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে। অপরদিকে ঢাকা থেকে দুপুর একটায় ছেড়ে রাত ৮টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রামে পৌঁছে। মেইল ট্রেন থাকাকালীন সময়ে এই ট্রেনের নম্বর ছিল ৬৭/৬৮। এখন আন্ত:নগরে রূপান্তর হওয়ায় ট্রেনের নম্বর হয়েছে ৮০১/৮০২। আর এতে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে চলাচলকারী আন্ত:নগর ট্রেনগুলোর মধ্যে সুবর্ন, মহানগর, গোধুলী, সোনারবাংলা, নিশীথার সাথে নতুন করে যুক্ত হলো চট্টলা এক্সপ্রেস।