মিলছে মহামায়া ও মুহুরী সেচ প্রকল্পের সুফল

দু’বছরে বেড়েছে ১১শ হেক্টর বোরো আবাদ

আমন ধানের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় চাষে আগ্রহী কৃষকরা

রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
মিরসরাইয়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে বোরো আবাদ। গত দুই বছরে এ উপজেলায় প্রায় ১১শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেড়েছে। সরকারের দুটি সেচ প্রকল্প- মুহুরী ও মহামায়ার সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া গত আমন মৌসুমে ধানের মূল্য বেশি পাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
মিরসরাই কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ১১৬০ হেক্টর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছিল ১৬০০ হেক্টর জমিতে। যা ২০২০ সালের চেয়ে ৪৪০ হেক্টর বেশি।
অন্যদিকে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬০০ হেক্টর। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারির পর্যন্ত আবাদ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৮০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ৬৮০ হেক্টর বেশি। ফলে বিগত দুই বছরে মিরসরাইয়ে বোরো আবাদ বেড়েছে ১১শ’ ২০ হেক্টর।
কৃষকরা জানান, এক সময় মহামায়া ও মুহুরী নদীর ঢলে মিরসরাই উপজেলার ওসমানপুর, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, ইছাখালী, দূর্গাপুরসহ বেশ কিছু ইউনিয়নে বোরো আবাদ হতো না। কিন্তু সরকার মুহুরী ও মহামায়া সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে উপজেলার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নে বোরো আবাদ হচ্ছে।
মিরসরাই কৃষি অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, বোরো আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৪০টি পানির স্কিম দিয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। কিন্তু ১৪০টি পানির স্কিমের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ১০০টি। ফলে বোরো চাষে ভাটা পড়তে শুরু করে এতদঞ্চলে। কিন্তু ২০১০ সালে উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নে মহামায়া ছরার উপর বাঁধ দিয়ে রাবার ড্যাম নির্মাণ করে সরকার। ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি আটকিয়ে তা শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা বোরো আবাদসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান তারা।
দূর্গাপুর ইউনিয়নের চাষি নুরুল মোস্তফা জানান, মহামায়া সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে আমরা এক দিকে পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা পাচ্ছি। অন্যদিকে বোরো আবাদ করতে পানির সংকটে পড়তে হচ্ছে না। চলতি বছরে দূর্গাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দেওয়ানপুর গ্রামের কৃষক দীলিপ চন্দ্রনাথ বলেন, পানির সুবিধা থাকার কারণে বোরো চাষ করেছি। কিন্তু তেলের দাম বেশি হাওয়ায় খরচ পড়বে বেশি। গত মৌসুমে কানিপ্রতি (১২০ শতাংশ) পানি খরচ হয়েছিল ৩০০০ টাকা, এবার ৩৫০০ টাকা। তবে আমনের মতো মূল্য পেলে তারা কিছুটা হলে লাভবান হবেন।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, মিরসরাই উপজেলায় ধীরে ধীরে বোরো আবাদ বাড়ছে। বোরো চাষের জন্য পানির বেশি প্রয়োজন হয়। মহামায়া ও মুহুরী সেচ প্রকল্প থাকায় কৃষকরা পানি সংকট পূরণ করতে পারছেন। এছাড়া আমনের মূল্য ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামীতে বোরো আবাদ আরো বাড়বে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।