ভোগান্তিতে নগর জীবন

আজ থেকে এক পক্ষের গণপরিবহন চালানোর ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক »
আজ থেকে কিছুটা বর্ধিত ভাড়ায় সড়কে চলবে পরিবহন মালিকদের এক পক্ষের সিটি বাস। দ্বি-পক্ষীয় সিদ্ধান্তে আন্তঃজেলা ও পণ্য পরিবহন নামবে সড়কে। গতকাল গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে নগর জীবন।
গতকাল শনিবার সকাল থেকে দিনের বিভিন্ন সময়ে নগরীর বেশ কিছু এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে পেশাজীবী মানুষ রাস্তার মোড়ে জটলা করেছে পরিবহনের অপেক্ষায়। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। দিনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন, সংঘর্ষ, পিকেটিং করেছে পরিবহন শ্রমিক। বাস বন্ধ থাকায় তারা অন্যান্য পরিবহন সড়কে চলতে বাধা সৃষ্টি করে। এতে দেখা গেছে বেশ কিছু মানুষের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে। সড়ক অবরোধ করে উশৃঙ্খল আচরণ করতে দেখা গেছে। বিআরটিসি বাসগুলোও চলতে দেয়নি শ্রমিকরা।
সকালে টাইগার পাস মোড়ে গাড়ির অপেক্ষায় থাকা এক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মহসিন বলেন, ‘সিএনজি নিয়ে আসতেই সড়কে গাড়ি আটকে দিয়েছে অবস্থানরত পরিবহন শ্রমিক। ডিজেল চালিত গাড়িতে সমস্যা হতে পারে কিন্তু সিএনজি চালিত গাড়ি কেন সড়ক অবরোধ করে বন্ধ রাখা হবে? এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুত দেওয়া প্রয়োজন। সবকিছু কি শুধু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব? সরকারি আমলা ও মন্ত্রীরা কি করছেন। এসব সিদ্ধান্ত দেওয়ার মত যোগ্যতাও কি কারোর নেই?’
রোববার সকাল ৬টা থেকে বর্ধিত ভাড়ায় সিটি বাস চলবে, জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘জনভোগান্তি থেকে কর্মজীবী মানুষের মুক্তির জন্য রোববার থেকে নগরীর গণপরিবহন চলবে। আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত সকল গাড়ি সড়কে নামবে।’
দ্রুত দাবি আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানো অথবা নতুন করে ভাড়ার চার্ট করাটাই আমাদের দাবি। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত যেহেতু এখনো পাওয়া যায়নি তাই আমরা বর্ধিত ভাড়ায় গণপরিবহন রাস্তায় নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সরকারের সিদ্ধান্তে আমরা অনড়।’
সরকারি সিদ্ধান্ত আসার আগে সিটি বাসের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ টাকা করে ভাড়া বেশি নেওয়া হবে। মেট্রো প্রভাতি এবং সোনার বাংলা স্পেশাল সার্ভিসের পরিবহনে ভাড়া প্রথম ৩ কিলোমিটারে ১০ টাকার ভাড়া বর্ধিত করে ১৩ টাকা নেওয়া হবে।
পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা করে বর্ধিত করা হবে বলে তিনি যোগ করেন।
এদিকে পরিবহনের সংকটের এমন মুহূর্তে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম ও পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে। টাইগার পাস মোড়ে প্রতিবাদ করায় এক শিক্ষার্থীর ওপর পরিবহন শ্রমিকদের চড়াও হতে দেখা গেছে। কাজেম আলী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সানজিদা মোক্তার তানজিন সুপ্রভাতকে বলেন, ‘পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজ আসতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শ্রেণি কার্যক্রম ও একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা স্থগিত করেছি।’
রোববার ১৫শ’ কন্টেইনার ডেলিভারি হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে জানান বন্দর কর্তৃপক্ষ সচিব ওমর ফারুক। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় বন্দরে কন্টেইনার জটের সৃষ্টি হতে পারে। এতে দেশের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য পরিবহনে বড় দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভাড়া বাড়ানো বা ভাড়ার চার্ট তৈরি করে পণ্য পরিবহনে কোন পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তেলের দাম কমাতে হবে টোলের বর্ধিত মূল্য কমাতে হবে। তাহলে পণ্য পরিবহন শ্রমিকেরা উপকৃত হবে বলে জানালেন বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, প্রইম মুভার পণ্য পরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব চৌধুরী জাফর আলম।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে পণ্য পরিবহন সড়কে নামবে। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সরকারের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া প্রয়োজন।’
পূর্বের দামে ডিজেল বিক্রয় অথবা নতুন ভাড়ার মূল্য নির্ধারণ করা আমাদের দাবি বলে জানালেন চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু। তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সরকারিভাবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত পাইনি। তাই আমাদের পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। দাবি আদায় না হলে গাড়ি চালাবো না। সরকারি নির্দেশনা ছাড়া কিছুই করা সম্ভব নয়। তাই পরিবহন বন্ধ রাখছি।
তিনি আরো বলেন, ‘বর্ধিত ভাড়ায় গাড়ি চালাতে হলে সাধারণ মানুষের জন্য পরিবহনে চড়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া ভাড়া নিয়ে সংঘাতে যেতে চাই না। এসব ঝামেলা না নিয়ে পরিবহন বন্ধ রাখাটা আমাদের জন্য মঙ্গলকর।’