বাংলাদেশকে শান্তির দেশ হিসেবে দেখতে চাই

সচেতন নাগরিক সমাজের গণসমাবেশে বক্তারা

দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে গতকাল চট্টগ্রাম নগরীতে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর ডিসি হিলের মুক্তাঙ্গনে ‘সর্বস্তরের সাংস্কৃতিক কর্মী ও সচেতন নাগরিক সমাজ’ এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। গণসমাবেশে শেষে ডিসি হিল থেকে আন্দরকিল্লা পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যান বিশিষ্টজন ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা।
সমাবেশে শহীদজায়া বেগম মুশতারি শফী বলেন, আমরা অনেক কষ্ট করে এই বাংলাদেশ অর্জন করেছি। আমরা যুদ্ধ করে পাকিস্তানের কাছ থেকে এই বাংলাদেশ ছিনিয়ে এনেছি। ১৯৫২ সাল থেকে ধারাবাহিক সংগ্রাম, লড়াইয়ের মধ্য দয়ে এই বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা শান্তির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই বাংলাদেশকে শান্তির বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চাই।’
সংবিধানের সংশোধনের দাবি জোরালোভাবে তোলার দাবি জানিয়ে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এটা বাদ দেওয়ার জন্য আমাদের সামাজিক জায়গা থেকে চাপ তৈরি করতে হবে। এটাই আমাদের আজকের আয়োজনের মূল বিষয়। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে সব ধর্মের মানুষ মিলে বাঙালি জাতীয়তার জাগরণ, বাঙালি ঐতিহ্যের লালন-আমাদের চেতনার পুনর্জাগরণে সকলকে আরও অনেক কাজ করতে হবে।’
সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এটাকে বার বার বিপথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, সমাজে ধর্মীয় উগ্রবাদ বেড়েছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে বাঙালি প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবকিছুর উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা, ভোট এবং লুটপাট।
খেলাঘরের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার মজুমদার বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান ফিরিয়ে আনুন। জামায়াত আওয়ামী লীগের ৩০ শতাংশ এমপি পদ দখল করার ঘোষণা দিয়েছে। আমার মনে হয়, ৩০ শতাংশ না পারলেও এরইমধ্যে তারা অনেকদূর এগিয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ কুমার দে বলেন, অনেকেই বলেন-আপনারা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন করেছেন, এখানে মুসলিম কোথায়। আমরা বলি-আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীতে মুসলিম আছেন, আমাদের সভা-সমাবেশে মুসলিমরা অবশ্যই থাকেন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ করেছি, সেজন্য আমাদেরও দুঃখবোধ আছে, কিন্তু সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম না আনলে আমাদের ঐক্য পরিষদ করতে হত না। আমরা ঐক্য পরিষদ করতে বাধ্য হয়েছি।
শিক্ষাবিদ আনোয়ারা আলম বলেন, যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসানের সঞ্চালনায় সমাবেশের শুরুতে উদীচী ও রক্তকরবী সংগঠনের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়া সমাবেশে আবৃত্তি ও পরিবেশিত হয়। বিজ্ঞপ্তি