ভেজাল অ্যান্টিবায়োটিক, জীবনঝুঁকিতে মানুষ

অনেকদিন ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও সেসব কোম্পানি যেমন, কোয়ালিটি, কাফকা, রিলায়েন্স এবং এমবি ফার্মাসিউটিক্যালস নাম ব্যবহার করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। শুধু উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের নামে নকল ওষুধ বানাচ্ছে তা নয়, জীবনরক্ষাকারী এই ওষুধগুলোও পুরোপুরি ভেজাল। আটা, ময়দা দিয়ে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল বানিয়ে বাজারে ছাড়ছে এক শ্রেণির প্রতারক। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার অভিযানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ এই তথ্য।
গত রবিবার ঢাকার মতিঝিল এবং বরিশালে অভিযান চালিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ভেজাল চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার পিস নকল অ্যান্টিবায়োটিক। আসল ওষুধ হলে এগুলোর বাজারমূল্য হতো প্রায় ২ কোটি টাকা। ডিবি জানিয়েছে, চক্রটি ঢাকার সাভার ও কুমিল্লায় নকল অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল তৈরি করত। পরে তা ট্রাক বা পিকআপে করে বরিশালে নিয়ে মজুত করা হতো। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ারের মাধ্যমে ওষুধগুলো সরবরাহ করা হতো। চক্রটি ৮ থেকে ১০ বছর ধরে এমন প্রতারণা করে আসছিল। যেসব ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশে নেই এবং যে ওষুধগুলো বাজারে নেই-সেগুলোই তারা তৈরি করে বাজারজাত করত।
আটা-ময়দা-কেমিক্যাল বা যখন যা ইচ্ছা তা প্রভৃতি মিশিয়ে তৈরি করা নকল ওষুধ রোগ সারানোর বদলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে রোগীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। লিভার, কিডনি, ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগের নকল ওষুধ ক্রয় করে মানুষ কীভাবে প্রতারিত হচ্ছে, তা বারবার গণমাধ্যমে এসেছে। দুঃখজনক হলো, ক্ষতিকর জেনেও বেশি লাভের আশায় কিছু ব্যবসায়ী নকল ওষুধ বিপণনে সহায়তা করে থাকে। নকল ওষুধ বিপণনে যারা সহায়তা করে থাকে, বিন্দুমাত্র মানবিক গুণাবলিও নেই তাদের মধ্যে। এসব অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। নকল ওষুধের বিস্তার কতটা ঘটেছে, তাও খুঁজে বের করা দরকার। এদের চক্রটিকে শনাক্ত করে কঠিন সাজা দেওয়া উচিত। বিবেচনা করতে হবে নকল বা ভেজাল ওষুধ তৈরি এবং বিপণনের সঙ্গে জড়িতরা বড় ধরনের অপরাধ করছেন। এদের অপরাধ মানবহত্যার মতো গুরুতর। কাজেই এসব অপরাধীর শাস্তি হিসেবে শুধু জরিমানা আদায় করলেই হবে না। শাস্তির পাশাপাশি আর যেন কোনো ধরনের ব্যবসা করতে না পারে সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।