ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বা ধরন বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের বিকল্প নেই

কোভিড-১৯ এর ক্রান্তিকালের রথ যেন সীমাহীন পথ পাড়ি দেবে। এ রথযাত্রার কালের সীমা-পরিসীমা মানুষের বোধগম্যতার স্তরে পৌঁছুতে আরও কতদিন লাগবে, মালুম করা যাচ্ছে না। চলমান সময়ে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি বাংলাদেশে কিঞ্চিৎ আয়ত্তে আসার আলামত দেখা যাওয়ার প্রাক্কালেই এলো আরেক বড় দুঃসংবাদ। সেটি হলো, করোনা ভাইরাসের ভারতীয় একটি ধরন (ভেরিয়েন্ট) বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে। সরকারের রোগতত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সম্প্রতি ভারতফেরত কয়েকজনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের ওই ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বা ধরনটি শনাক্ত করেছে। ওই ভারতীয় ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি সাবটাইপ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে বি.১.৬১৭ ধরনটি। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে গেল বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। জানা গেছে, ভারত থেকে আসা দুই বাংলদেশি নাগরিকের শরীরে এই ধরনটি চিহ্নিত করা হয়েছে। দেশে ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরও ১৪ দিন বাড়ানো হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত বন্ধ রয়েছে। স্থলপথে ভারত থেকে যাত্রী আসা-যাওয়া বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসের ধরন ঠেকাতে যশোর বিমানবন্দরে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
এই নতুন আপদটি বাংলাদেশের জনমনে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, সন্দেহ নেই। কারণ, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। এবং এসব পথে সীমান্তবর্তী মানুষের যাতায়াত অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টার হিসাব বলছে, স্থলবন্দর দিয়ে ৩৬৩জন এবং বিমানবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৪ হাজার ৮৪৮ জন মানুষ বাংলাদেশে এসেছে। এদিকে বিদেশ থেকে আসা দেশি-বিদেশি নাগরিকদের কোয়ারিন্টিনে (সঙ্গনিরোধ) রাখার ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ধরনটি বাংলাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, সাধারণ ভাইরাসের চেয়ে এই ধরনটির সংক্রমণ ক্ষমতা ২০ গুণ বেশি। বর্তমানে ভারতে শনাক্ত রোগীদের প্রায় ২০ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছে এই ভারতীয় ধরনের মাধ্যমে।
এ অবস্থায় সবধরনের সতর্কতার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ার কোনো বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। সবাইকে মাস্ক পরতেই হবে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের ওপর (শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা অন্যদের চিহ্নিত করা) জোর দিতে হবে। সামনে আসছে এই জনপদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। একমাস পূর্ণ সিয়াম সাধনার পর এই ঈদের জন্যে অপেক্ষা এখানে সম্পূর্ণ অন্যরকমের আবেদনময় পরিবেশ সৃষ্টি করে। এ উৎসব বাঁধভাঙা আনন্দের প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। ঠিক এই সময়টাতেই আমাদের এখানে ভারতীয় ভেরিয়েন্টের হদিস পাওয় যাবার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় সহজাত আবেগ ও অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বনে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা চালাতে হবে প্রত্যেক নাগরিকের।