ভর মৌসুমেও মিলছে না রস

কমছে খেজুর গাছ

জাহিদ হাসান হৃদয়, আনোয়ারা »

পৌষের হাড়কাঁপানো শীত, চারদিকে কুয়াশা। তবে এই শীতের সকালে খেজুর রসের মিষ্টি ঘ্রাণ পাওয়া যায়না। শীতকালে কাঁচি, একগাছি রশি, একদ- বাঁশ ও কোমরে ঠুঙ্গি ঝুলিয়ে গাছে উঠতে আর দেখা যায় না গাছিদের, দেখা যায়না সকালে কাঁধে ভার চেপে ঝুলন্ত কলস নিয়ে খালি পায়ে তাঁদের গ্রামের মেঠোপথে ছুটার দৃশ্য। গ্রামের অলিতে-গলিতে এখন আর শুনা যায় না ‘খেজুর রস নিবেননি খেজুর রস, আছে খেজুরের মিষ্টি রস’ বলে গাছিদের চিৎকার। গ্রামবাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যে খেজুর গাছের সাথে শীতকালের যে নিবিড় সম্পর্ক তা এখন শুধু বইয়ের পাতায় শোভা পায়। এখানকার শিশু-কিশোরেরা জানেনা খেজুর রসের স্বাদ কেমন। গ্রামে এখন লেগেছে শহরের ছোঁয়া, শহরায়নের আগ্রাসনে প্রকৃতির ঐতিহ্য খেজুর গাছ এখন প্রায় বিলুপ্ত।

সরেজমিনে আনোয়ারা উপজেলার গহিরা উপকূল, ফকিরার চর, বরুমচড়াসহ খেজুর গাছের বেশ কয়েকটি আবাসভূমি ঘুরে দেখা যায়, এক যুগ আগেও যেখানে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেতো সেখানে এখন দু’একটা গাছ নিস্তেজ অবস্থায় চোখে পড়েছে। আগেরকার শীতকালীন হাট-বাজারে বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে চাষি-গাছিরা রস বিক্রি করতো অথচ এখন সারা বাজার খুঁজেও খেজুর রসের দেখা মিলেনা। মাঝে মধ্যে রাস্তার ধারে বা বাজারে খেজুর রস বিক্রেতা দেখা মিললেও আগের সেই কাঠি রস আর নেই। পানি এবং বিভিন্ন প্রজাতির মিঠাই’র সাথে অল্প কিছু খেজুর রস দিয়ে এই রস গুলো তৈরি করা হয়।

বরুমচড়া ইউনিয়নের খেজুর রস বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কিছু বছর আগেও প্রায় ১শত মতো খেজুর গাছ ছিলো আমার। এখন সব মিলিয়ে দশ টাও নেই। তার মধ্যে ৩-৪ টা গাছ থেকে রস পাওয়া যায়। এসব রস কেজিপ্রতি দু’শ টাকা করে বিক্রি করেন বলে তিনি জানান।
হাইলধর গ্রামের রস বিক্রেতা ওসমান গণি বলেন, আগে রাস্তার পাশে পাশে খেজুর গাছ থাকতো, কিন্তু এখন রাস্তা-ঘাট উন্নত হচ্ছে, বড়-বড় গাড়ি চলছে। গাড়ির ধোঁয়ায় অনেক গাছ মারা গেছে। তাছাড়া রাস্তা সংস্কারের জন্যও অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আগে শুধু রস বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হতো আর এখন নিজে খাওয়ার জন্যও রস পায় না।

জুগীপাড়া গ্রামের গাছি রনধর বলেন, আগে শীত মৌসুম জুড়ে ছিলো আমার ব্যস্ততা, শীতের শুরুতে গাছের মালিকরা আমার খোঁজ নিতো। এখন অনেক গাছ মরে গেছে, তাই কেউ এখন আর আমাকে ডাকে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, মানুষ এখন দ্রুত উৎপাদনশীল ফসল এবং ফলের দিকে ঝুঁকছে। উন্নত জাতের আম গাম, কাঁঠাল গাছ রোপণ করছে। খেজুরের রস এবং ফল বছরে একবার হয়। তাই মানুষ খেজুর গাছের দিকে এখন তেমন নজর দিচ্ছে না। ফলে ধীরে ধীরে খেজুর গাছ গুলো মারা যাচ্ছে।