বৃষ্টি আইনে জয়ের হাসি আফগানদের

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

সাগরিকায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে গতকাল তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। ঘরের মাঠে ওয়ানডে খেলা মানেই আধিপত্য বাংলাদেশের। তবে গতকাল মুদ্রার উল্টো পিট দেখতে হয়েছে সাকিব-তামিমদের। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে আফগানদের বোলিংয়ে তোপে দাঁড়াতেই পারেনি টাইগাররা। দুই দফায় বৃষ্টি নামায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে ৭ ওভার। বৃষ্টি আইনে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। তবে বৃষ্টি আইনে আফগানদের লক্ষ্য কমে দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে ১৬৪ রান। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২২তম ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৮৩ রান তোলার পর বৃষ্টির কারণে খেলা আর মাঠে গড়ায়নি। ফলে ডিএলএস ম্যাথডে ১৭ রানে এগিয়ে থাকায় ম্যাচ জিতে নেয় আফগানিস্তান। খবর ঢাকামেইল’র।

১৬৪ রানের ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেশুনে খেলতে থাকে আফগানিস্তান। দুই আফগান ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান টাইগার বোলারদের কোন সুযোগ না দিয়ে কিছুটা ধীর গতিতে রান তুলতে থাকেন। কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১৫ ওভারে ৫৩ রান তুলে সফরকারীরা।

তবে দলীয় ৫৪ রানের মাথায় সাকিবের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে নাজমুল শান্তর হাতে তালুবন্দি হন গুরবাজ। এতে ভাঙে এই জুটি। ৪৫ বলে ২২ রান করে সাজঘরে ফেরেন গুরবাজ।

এরপর দ্বিতীয় উইকেটে রহমত শাহ এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। স্কোরবোর্ডে ৮ রান যোগ করতেই তাসকিনের করা দ্বিতীয় স্পেলের দ্বিতীয় বলে খোঁচা দেন রহমত। স্লিপে তা দারুণভাবে তালুবন্দি করেন লিটন কুমার দাস। এতে দলীয় ১৬ রান ব্যবধানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় আফগানরা। তবে ম্যাচে বৃষ্টির শঙ্কা থাকায় দেখেশুনে সাবধানে খেলতে থাকে হাশমতউল্লাহ শাহিদি ও ইব্রাহিম জাদরান।

বৃষ্টির কারণে ২২তম ওভারের পর আর খেলা শুরু সম্ভব নয়। ডিএলএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে প্রথম ওয়ানডে জিতেছে আফগানিস্তান। ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সফরকারীরা।

এর আগে সাগরিকায় টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয় দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এ জুটিতে গড়েন ৩০ রান। কিন্তু ফারুকির ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারেই হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম। অফ-স্টাম্পের বাইরের বলটি কাট করে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে গর্জে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু এবার বেশ খানিকটা লাইন পরিবর্তন করলেন ফারুকি, এই বলে আলতো করে ব্যাট চালিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনেন টাইগারদের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার।

আর তামিমকে ফিরিয়ে পাওয়ার প্লেতেই প্রথম উইকেটের দেখা পেয়ে যায় আফগানিস্তান। ১৩ রানে ফেরেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। দলীয় ৩০ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শুরুতে তামিম ফেরার পর চাপ সামলে নিয়ে খোলস ছেড়ে বের হতে শুরু করেন লিটন দাস। কিন্তু বের হওয়ার আগেই তাকে থামতে হয় মুজিব উর রহমানের শিকার বনে। মাঠ ছাড়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান।

লিটনের বিদায়ের পরপরই মাঠ ছাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্যর্থতার বেড়াজাল ছিড়ে বের হতে ব্যর্থ হয়ে এবারও তাকে মাঠ ছাড়তে হয় ১২ রান করে। এরপর চতুর্থ উইকেটে ব্যাট করতে আসে তৌহিদ হৃদয়। তাকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হসান। এ দুই জনের জুটিতে দলীয় শতরান পার করে টাইগাররা।

তবে দলীয় শতরান করে বেশিক্ষণ উইকেটে থিতু হতে পারেননি সাকিব। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের করা বলে দলীয় ১০৯ রানে আউট হন টাইগার অলরাউন্ডার। এতে হৃদয়ের সঙ্গে সাকিবের জুটি থামল ৩৭ রানে। ৩৫ বলে ১৪ রান করেন সাকিব আল হাসান। এর পর পঞ্চম উইকেটে আসেন মিষ্টার ডিপেন্ডবল মুশফিকুর রহিম। তবে উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি এই মুশফিক। সাকিবের আউট হওয়ার তিন রান ব্যবধানে রশিদ খানের করা বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ৩ বলে করেন ১ রান।

ষষ্ট উইকেটে আসেন এর আগে দুই সিরিজে বাদ পরা বাঁহাতি ব্যাটার আফিফ হোসেন। আজ নিজেকে প্রমান করার সুযোগ ছিলো এই ক্রিকেটারের। তবে ব্যর্থ হন আফিফ। রশিদের লেগ স্পিন ব্যাকফুটে ভর করে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়েছিলেন আফিফ, তবে মিস করে প্যাডে লাগে বাঁহাতি এই ব্যাটারের। আম্পায়ার প্রথমে সাড়া দেননি।

তবে আফগানিস্তান রিভিউ নিলে, বল ট্র্যাকিংয়ে আউট হন টাইগার এই ব্যাটার। ফলে ৪ রান করেই সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর ক্রিজে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। ৫ রান করে ফজল হক ফারুকির বলে লেগ বি ফোরের ফাঁদে পড়েন এই অলরাউন্ডার। এরপর সপ্তম উইকেটে তাসকিন আসলেও বেশিক্ষণ স্থীর হতে পারেননি। দলীয় ১৫৩ রানে এলবিডব্লিউ ফাদে পরে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।

পরে থিতু হয়ে খেলতে থাকা হৃদয় নিজের অর্ধশত রান তুলে বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। দলীয় ১৬৪ রানে সাজঘরের পথ ধরেন। শেষদিকে ৪৩ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে থামে স্বাগতিকদের ইনিংস।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন হৃদয়। আফগানিস্তানের হয়ে ৩টি উইকেট নেন ফজল হক ফারুকি। দুইটি করে উইকেট নেন রশিদ খান ও মুজিবুর রহমান।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে চট্টগ্রামের সাগরিকায় ৮ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে।