বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে হবে

গত শনিবার (৫ জুন) থেকে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু হয়েছে। তিন মাস বিস্তৃত এই অভিযান চলবে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে মানুষ ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে সবুজায়ন বাড়ানোর লক্ষে বেশি করে গাছ লাগাতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন গণভবনে বৃক্ষরোপন অভিযান উদে¦াধনকালে সরকারপ্রধান বলেন, আমি আজ নিজে বৃক্ষরোপণ করলাম। সেই সাথে আমি সকল দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো, যে যার যেখানে যতটুকু জায়গা পান অন্তত গাছ লাগান। তিনটি করে গাছ লাগাতে পারলে সব থেকে ভালো হয়। আর সেটা যদি না পারেন অন্তত একটা গাছ হলেও রোপণের চেষ্টা করুন। আমরা চাই যে একটা ফলজ, একটা বনজ আর একটা ভেষজ এই তিন ধরনের গাছ লাগাবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আমাদের। আজকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবুজবাংলাকে আরও সবুজ করতে হবে। মানুষের জীবনে গাছের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাছ আমাদের জীবনে অনেক উপকার দেয়। সেজন্য গাছ লাগানোর পাশাপাশি গাছের যতœ নেবারও পরামর্শ দেন তিনি।
পরিবেশরক্ষা, আর্থিক সচ্চলতা আনায়ন প্রভৃতি কাজে বৃক্ষরোপণ আমাদের সহায়ক শক্তিরূপে কাজ করে। সেই জন্যেই কবি রবীন্দ্রনাথ উচ্চারণ করেছিলেন, ‘বৃক্ষ, মানবের চিরসখা’। সৃষ্টির শুরু থেকেই বৃক্ষ-লতাপাতা আচ্ছাদিত স্থানে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে প্রথমত। সেখান থেকেই শুরু হয়েছে তার জীবনযাপনের অন্যান্য সূত্রের অনুসন্ধান। বৃক্ষই তাকে দিয়েছে প্রশান্ত পরিবেশে চিন্তনের অবকাশ। সেজন্যেই আমরা দেখি ভারবর্ষের সকল বাদী-সম্বাদী দর্শন ও চিন্তাচেতনার ধারাকে বলা হচ্ছে, তপোবন সভ্যতা। আজ সভ্যতার বিবর্তনে অথবা বিপুল জনসংখার জন্যে প্রতুল আবাসনের সংস্থান, শিল্পকারখানা নির্মাণ কিংবা অনিবার্য নগরায়নের জোয়ারে আমরা তার অনেক কিছুই উৎপাটন করেছি। শুধু ভারতবর্ষ বা দক্ষিণ এশিয়া নয়, সারাবিশ্বেই এখন একই দৃশ্যপট। সবুজ বনানী তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে। ন্যাড়া পাহাড়গুলো যেন আমাদের মন ও মননের দৈন্যের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এরই ফলশ্রুতিতে আসছে জলবায়ু পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয়। বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে চলছে প্রবল হাহাকার। এই পরিপ্রেক্ষিতে বৃক্ষরোপণের প্রযোজনীয়তা আর কোনোভাবেই পাশ কাটানো যায় না। প্রধানমন্ত্রীও ঠিক সেই জায়গাতেই জোর দিচ্ছেন।
সবুজবাংলা গড়ার যে আহ্বান তিনি জানিয়েছেন তা আমাদের নতুন ভাবনায় উজ্জীবিত করুক। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রথমে সবুজবাংলা নিশ্চিত করা না-গেলে জাতির পিতার সোনার বাংলা অধরা থেকে যাওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ সবুজের পরিণতরূপ থেকেই আসে সোনারবরন ফসলের রূপ। আর সবুজ মানেই তো জীবনের গান। পশুপাখি তথা জীববৈচিত্র্যের অভয়ারণ্য। তা থেকেই সমৃদ্ধির শুরু। কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন। এই সবুজায়ন থেকেই আমরা পাচ্ছি সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে অক্সিজেনের জোগান। কাজেই বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে প্রকৃতি ও মানুষকে জাগিয়ে তোলা ও তাদের বাঁচিয়ে রাখার যে কোনোই বিকল্প নেই, এটা উপলব্ধির সময় এখন।