বিপণিকেন্দ্রগুলোতে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে

নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রিয়াজউদ্দিন বাজারে ৭৮টি মার্কেটে মোট ৩০ হাজারের মতো দোকান ও সাড়ে ১৩ হাজার গুদাম রয়েছে। আবাসিক ভবন রয়েছে ৪৫০টি। তামাকুমণ্ডি লেইনের ১২০ মার্কেটে ১০ হাজারের মতো দোকান রয়েছে। টেরিবাজারের ৭৮টি মার্কেটে রয়েছে ৫ হাজার ৩১০টি দোকান। জহুর হকার্স মার্কেটে প্রায় ১ হাজারের মতো দোকান ও গুদাম রয়েছে। এসব মার্কেটের দোকান এবং গুদামের কয়েকটিতে নামমাত্র অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা আছে। আর প্রায় মার্কেট, দোকান, গুদাম এবং আবাসিক ভবনে কোনো অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাই নেই। ।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নগরের ৫৪টি মার্কেট রয়েছে চরম অগ্নিঝুঁকিতে। তার মধ্যে রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট, তামাকুমণ্ডি লেইন, পৌর জহুর হকার্স মার্কেট ও টেরিবাজারও রয়েছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে এসব বিপণিকেন্দ্র পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচটি জলাধার নির্মাণের সুপারিশ করা হলেও এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত মার্কেটগুলোতে অন্তত ১৩টি ছোটো বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী গতবছরে রিয়াজউদ্দিন বাজার, টেরিবাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, আসাদগঞ্জ, খাতুনগঞ্জ, নিউমার্কেট, শাহ্ আমানত মার্কেটসহ আশেপাশের এলাকায় ৭৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে জহুর হকার্স মার্কেট এবং রিয়াজউদ্দিন বাজারে পৃথক দু’টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৮টায় রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় এন এইচ চৌধুরী প্লাজার ছয়তলা একটি ভবনের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে ২ ফেব্রুয়ারি জহুর হকার্স মার্কেটে হাজী নুর ছোবহান ক্লথ স্টোর নামের একটি কাপড়ের গুদামে আগুন লেগে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত দোকানমালিক। এই দুই ঘটনায় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাতের কথা জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তারাও বলেন, প্রত্যেক মার্কেটে যাতে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয় সেবিষয়ে মার্কেট কমিটিকে বার বার জোর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক মার্কেটে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন মার্কেটে পানির ট্যাংকগুলো যাতে সব সময় পরিপূর্ণ রাখা হয় সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গলিগুলো সংকীর্ণ যার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি গলি দিয়ে প্রবেশ করতে পারে না। তাছাড়া যারা মার্কেট কমিটি আছে তাদের সাথে আমরা বিভিন্ন বৈঠকে কীভাবে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা করে আসছি।
আগুন লাগার প্রধান কারণ পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানান, ‘এলোমেলো বৈদ্যুতিক তার, অপরিকল্পিত গোডাউন, বিভিন্ন হোটেলের রান্নার চুলা, পুরনো কেবল, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকার ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
এ হলো বিপণিকেন্দ্রগুলোর হালচাল। এখন শুষ্ক মওসুম। এখন ঘরবাড়িতেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটবে। এখানে সমস্যা একই। সরু পথ, যেখানে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারে না। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে পানির উৎস পাওয়া যায় না। এ দুই সমস্যাই মানবসৃষ্ট। আর তাদের সৃষ্ট সমস্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারাই। তবুও তাদের ভেতর বিবেক জাগ্রত হয় না, তারা সচেতন হয় না। এ ক্ষেত্রে সরকার বা ফায়ার সার্ভিসের বড় দায়িত্ব হলো এ বিষয়ে কঠোর হওয়া। আইন না মানলে তা মানতে বাধ্য করা।