বিজয়ের চেতনা সমুন্নত রাখতে চাই অকৃত্রিম দেশপ্রেম

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনী ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর নির্মম ও তুলনারহিত বর্বরোচিত হামলা চালালে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে শহিদ হয় ত্রিশ লাখ মানুষ। ধর্ষিত হয় প্রায় তিন লাখ নারী। এক কোটি মানুষকে প্রাণ বাঁচাতে ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে হয়। প্রায় নয় মাসব্যাপী পাকিস্তানিরা এদেশে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। বিশ্বের ইতিহাসে ২৬৬ দিনে ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করার নজির কোথাও নেই।
স্বাধীনতার ঘোষণা বঙ্গবন্ধু মূলত ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) দিয়েছিলেন। পাকিস্তানিরা আক্রমণ করলে, বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করলে তার অবর্তমানে জাতি কী করবে তার সমুদয় নির্দেশনা প্রদান করে তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
যে রাষ্ট্রটি থেকে য্দ্ধু করে আমরা স্বাধীনতা এনেছিলাম সে পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ সবধরনের সূচকে এগিয়ে থেকে প্রমাণ করেছে বাঙালিকে সত্যি কেউ ‘দাবাইয়া’ রাখতে পারে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে যতবার স্বাধীনতার কথা বলেছেন তার চেয়ে বেশি বলেছেন মুক্তির বিষয়ে। কারণ তিনি জানতেন স্বাধীনতা অর্জিত হলেও মুক্তির লড়াইটি হবে দীর্ঘ। যে কারণে আমাদের জনযুদ্ধের নাম মুক্তিযুদ্ধ। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাধীনতার পাশাপাশি মানুষের প্রকৃত মুক্তি। সে মুক্তি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে, সে মুক্তি শোষণ ও বঞ্চনা থেকে, সে মুক্তি সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ থেকে। সকল শৃঙ্খল থেকে মুক্তির যে আহ্বান জাতির পিতা করেছিলেন সে মুক্তি আমাদের এখনো আসেনি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য কমলেও সমাজে বৈষম্য কমেনি। আমরা দূর করতে পারিনি সমাজ থেকে সাম্প্রদায়িকতা, কূপমণ্ডুকতা, কুসংস্কার। কাজেই তার নির্দেশিত মুক্তির সংগ্রাম আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে যতদিন কাক্সিক্ষত মুক্তি অর্জিত না হয়।
মাত্র তিন সপ্তাহ পরে দেশে সাধারণ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও সহিংস হয়ে উঠছে। বাসে আগুন দেওয়া, রেল লাইন কেটে দেওয়ার মতো অন্তর্ঘাতমূলক অপকর্ম করছে একটি মহল। রাজনীতি বা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে এমন কাজ চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না। এটি মোটেও কাম্য নয়। আমরা মনে করি সকল ক্ষেত্রে আমাদের সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। দেশের স্বার্থকে সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে। জনগণের জানমাল রক্ষায় আন্তরিক হতে হবে। অনেক দাম দিয়ে কেনা আমাদের স্বাধীনতা। একে বিপন্ন করা যাবে না। তাই বিজয়ের চেতনা সমুন্নত রাখতে চাই অকৃত্রিম দেশপ্রেম।