বার্সার কাছে পাত্তাই পেল না রিয়াল মাদ্রিদ

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক

নিজেদের পুরনো রূপ ফিরে পেয়েছে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা। একেরপর এক প্রতি দল ঝড়ে বেগে উড়িয়ে দিচ্ছে ক্লাবটি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে নিয়ে একপ্রকার ছেলে খেলাই করলো জাভি হার্নান্দেজের দল। খবর ডেইলি বাংলাদেশ’র

রোববার রাতে রিয়ালের ঘরের মাঠে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে স্প্যানিশ লা লিগায় মৌসুমের শেষ এক ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা।  ৪-০ ব্যবধানে জিতেছে কাতালান ক্লাবটি। দারুণ ছন্দে থাকা দুই দলের লড়াই শুরুতেই উত্তাপ ছড়ায়। ম্যাচ শুরুর ১২ সেকেন্ডের মাথায় ফেররানকে আটকাতে ফাউল করেন রিয়াল ডিফেন্ডার এদের মিলতাও।

প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ রিয়াল পায় পঞ্চম মিনিটে। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে রদ্রিগোর নেওয়া শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। দুই মিনিট পর গতির ঝলক দেখিয়ে বক্সে ঢুকে আরাহোকে কাটিয়ে কাটব্যাক করেন ভিনিসিউস জুনিয়র। ছুটে এসে ফেদে ভালভেরদের নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।

দ্বাদশ মিনিটে থিবো কোর্তোয়ার ডাবল সেভে বেঁচে যায় রিয়াল। ফেররানের পাস ছয় গজ বক্সের বাইরে ফাঁকায় পেয়ে অবামেয়াংয়ের নেওয়া শট দারুণ রিফ্লেক্সে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। আলগা বল পেয়ে দেম্বেলের শট কোনোমতে ঝাঁপিয়ে ঠেকান কোর্তোয়া। চার মিনিট পর প্রায় ২২ গজ দূর থেকে ফেররানের শট দূরের পোস্ট ঘেঁষে বাইরে যায়। ২৪তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। পেদ্রির উঁচু বল বক্সে পেয়ে তার নেওয়া শট দারুণভাবে ব্লক করেন এদের মিলিতাও।

২৯তম মিনিটে আর বাঁচতে পারেনি রিয়াল। ক্যারিয়ারে নতুন উদ্যম খুঁজে পাওয়া দেম্বেলে ডান দিক থেকে দারুণ ক্রস বাড়ান আর কোনাকুনি হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন অবামেয়াং। রিয়ালের দুঃস্বপ্নময় রাতের শুরুও হয়। গোল পেয়ে আরও উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠে বার্সেলোনা। ৩৫তম মিনিটে অবশ্য সমতা টানার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন ভিনিসিউস। প্রতি-আক্রমণে সবাইকে পেছনে ফেলে ওয়ান-অন-ওয়ানে গোলরক্ষককে কাটাতে গিয়ে গুলিয়ে ফেলেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। ভারসাম্য হারিয়ে নিজেই পড়ে যান। এর তিন মিনিট পর রিয়াল সমর্থকদের স্তব্ধ করে দেয় আরাহোর গোল। অ্যাসিস্টের ভূমিকায় আবারও দেম্বেলে। তার আরেকটি দারুণ ক্রসে লাফিয়ে হেডে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন উরুগুয়ের ডিফেন্ডার। চলতি মৌসুমে অনেকবার দেখা গেছে, খাদের কিনারা থেকে রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনা। এখানে তাদের সেই সুযোগই দেয়নি বার্সেলোনা।

বিরতির পর ম্যাচ শুরুর ১৭ সেকেন্ডের মাথায়ই প্রতি-আক্রমণে গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান ফেররান। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে মেরে বসেন তিনি। পরের মিনিটেই সেই হতাশা মুছে দেন ফেররান। অবামেয়াংয়ের ছোট পাস বক্সে পেয়ে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ম্যানচেস্টার সিটি থেকে জানুয়ারিতে কাম্প ন্যুয়ে আসা এই তরুণ।

তিন গোল খেয়ে দিশা হারিয়ে ফেলা রিয়াল চার মিনিট পরই হজম করে চার নম্বরটি। নিজেদের অর্ধ থেকে ফেররানের উদ্দেশ্যে উঁচু করে বল বাড়ান জেরার্দ পিকে। সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে তিনি পাস দেন অবামেয়াংকে। লক্ষ্যভেদে কোনো ভুল করেননি তিনি। এসময় পেছনেই ছিলেন মিলিতাও, কিন্তু তারা সবাই যেন ভেবেই নিয়েছিলেন বাজবে অফসাইডের বাঁশি। বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ভিএআর জানায় গোল এবং স্কোরলাইন ৪-০।

৫৭তম মিনিটে অবামেয়াংয়ের হ্যাটট্রিকও হতে পারত। কিন্তু বাঁ থেকে জর্দি আলবার পাস ছয় গজ বক্সে ফাঁকায় পেয়ে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। তিন মিনিট পর ফেররানের জোরাল শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান কোর্তোয়া। এরপরেও তারা সুযোগ তৈরি করেছে আরও কয়েকটি। ৬৪তম মিনিটে যেমন আরও একবার উন্মুক্ত হয়ে পড়ে রিয়ালের রক্ষণ। তবে ফেররানের এই শটও রুখে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। লিগে আগের চার ক্লাসিকোতেই হেরেছিল বার্সেলোনা, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সংখ্যাটা ছিল পাঁচ। এ ম্যাচেও রিয়ালের জয়ের সম্ভাবনাই দেখেছিল অনেকে। সব সম্ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিল বার্সেলোনা। এখানে হারলেও লিগ টেবিলে রিয়ালের শীর্ষে অবস্থান অবশ্য সুসংহতই থাকছে। ২৯ ম্যাচে ২০ জয় ও ৬ ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ৬৬। ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সেভিয়া। এক ম্যাচ কম খেলা বার্সেলোনা ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে তৃতীয় স্থানে।