বায়ুদূষণে বিবর্ণ প্রাচ্যের রানি

এখনও শুষ্ক মৌসুম শুরু হয়নি পুরোপুরি। কয়েকদিন পর পর বৃষ্টিও হচ্ছে কিন্তু এরই মধ্যে ধুলায় ধূসর হয়ে পড়ছে বন্দর শহর চট্টগ্রাম। বিশেষ করে টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, জামাল খান, নন্দনকানন, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, হালিশহর, বাকলিয়া, পোর্ট কানেকটিং রোড, বন্দর, পতেঙ্গা, ইপিজেড, মাঝিরঘাট, সদরঘাট, নিউ মার্কেট এলাকায় এখনই নিশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের কারণে পুরো এলাকা ধুলোয় ঢাকা। নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় তো দিনের বেলায়ও কুয়াশার মতো থাকে। মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, মোহাম্মদপুরসহ ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হয় মানুষের বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম ওয়াসার নানা উন্নয়নমূলক কাজ চলার কারণে ধুলোবালি বাড়ছে। ধুলোর কারণে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে ফুসফুসের ক্যান্সারসহ নানা জটিলতা এবং চর্মরোগের বিস্তার ঘটছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের বাতাস এখন অস্বাস্থ্যকর। বাতাসের মান পরিমাপের জন্য নগরীর আগ্রাবাদ, ফয়’স লেক ও নাসিরাবাদে পরিবেশ অধিদপ্তরের তিনটি স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনের পর্যবেক্ষণে চট্টগ্রামের বাতাসের মান স্বাস্থ্যকর পর্যায়ে নয় বলেই দেখানো হচ্ছে। শীতকালে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বাতাসের মান আরও খারাপের দিকে যায়। অথচ ভৌগলিক কারণ অর্থাৎ চট্টগ্রাম পাহাড়, নদী, গাছপালা ও সমুদ্র পরিবেষ্টিত হওয়ায় বায়ুদূষণ কম হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে এই নগরীতে বায়ুদূষণ চরম অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুদূষণের কারণে চট্টগ্রামবাসীর গড় আয়ুও কমে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বাতাসে ক্ষতিকর উপাদান বা সাসপেন্ডেড পার্টিকুলেট ম্যাটরিয়ালস (এসপিএম)-এর গ্রহণযোগ্য মাত্রা ২০০-এর নিচে থাকার কথা থাকলেও চট্টগ্রামে এই মাত্রা অনেক বেশি। বৃষ্টিপাতের অভাবে শীতকালে বাতাসে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। আবার বর্ষাকালে বায়ুদূষণ কম থাকে। দূষণের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে চট্টগ্রামের পরিবেশ ও বায়ু এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে, স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়াও কখনো কখনো কষ্টকর হচ্ছে। ধুলার কারণে বিবর্ণ হয়ে পড়ছে রাস্তার পাশের সব গাছপালা ও অবকাঠামো। ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, ব্রংকাইটিসের মতো মারাত্মক রোগব্যাধির বিস্তার হচ্ছে আশংকাজনক হারে। বায়ুদূষণের কারণে মানুষের শরীরে ক্ষতিকর রোগ ছাড়াও ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজসহ (সিওপিডি) বিভিন্ন রোগ বাড়ছে। দূষণের কারণে মানসিক অস্থিরতা, বিষণœতা ও হতাশা বাড়ছে।
সিটি করপোরেশনের ছয়টি বিশেষায়িত সুইপিং গাড়ি এবং ১৬টি পানিবাহী গাড়ি আছে। তবে ছয়টি সুইপিং গাড়ির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। ধুলোবালি দমাতে পানি ছিটানোর কার্যক্রমও থমকে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মেয়র সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এত বেশি ধুলোবালি যে, পানি ছিটিয়েও সুফল মেলে না। পানি ছিটানোর ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আবার ধুলো সবকিছু ঢেকে ফেলে। সুইপিং মেশিনের কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এত বেশি ধুলো মেশিন ঠিকঠাকভাবে সামলাতে পারে না।’
তারপরও কথা থাকে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও জীবনমান উন্নয়নের জন্যই তো সিটি করপোরেশনের মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্ম। কাজেই যেমন করেই হোক নাগরিকদের সেবাদান করতেই হবে।