বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা ছেলে

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চট্টগ্রামে ‘কিশোর গ্যাং’-এর সদস্যদের হামলায় প্রাণ হারান দন্তচিকিৎসক কুরবান আলী। যে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন দাঁতের চিকিৎসক কোরবান আলী, বাবাকে হারিয়ে সেই ছেলে এখন দিশেহারা।

“বাবাকে ছাড়া আমরাতো কোথাও যেতাম না। প্রতি ঈদে আমরা দুই ভাই নামাজেও যেতাম বাবার সাথে। এবার বাবা নাই… মাথার ওপর থেকে ছায়াটাই নাই হয়ে গেল। বলেন কীভাবে ভালো থাকি?” শুক্রবার টেলিফোনে এভাবেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কষ্টের কথা বলেন কোরবান আলীর ছেলে আলী রেজা।

এই ছেলেকেই বাঁচাতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকায় গত ৫ এপ্রিল বিকালে স্থানীয় বখাটেদের হামলার শিকার হয়েছিলেন চিকিৎসক কোরবান আলী। পাঁচদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ঈদের আগের দিন গত বুধবার ভোরে মারা যান তিনি।

ফিরোজশাহ কলোনিতে থাকলেও গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নের সাতঘরিয়ায় বুধবার রাতেই দাফন করা হয় কোরবান আলীকে। খবর বিডিনিউজের।

আলী রেজা বলেন, “প্রতিবছর আমরা শহরের বাসায় ঈদ করতাম। এবার ঈদের আগের দিন বাবাকে বাড়ি নিয়ে এসেছি। বাবাকে রেখে আমরা কীভাবে শহরে যাই? যে ঘরের বাবা চলে যায় সেখানে কি আর ঈদের আনন্দ থাকে?”

বাবার স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, “প্রতি বছর ঈদে আমরা দুই ভাই বাবার সাথে নামাজ পড়তে যেতাম। কোথাও একা ছাড়তাম না বাবাকে। সবাই একসাথে সব জায়গায় যেতাম। আমরা বাইরে কোথাও গেলে কিংবা বাসায় আসতে দেরি হলে বাবা ফোন করে খবর নিতেন… এগুলো এখন স্মৃতি।”

আলী রেজা বলেন, “আমার বাবা কখনও কারো ক্ষতি করেনি। গরীবদের বিনামূল্যে চিকিৎসা করতেন, বিভিন্ন সহযোগিতা করতেন। আমার বাবার জানাজায় এত মানুষ হয়েছিল সেটা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি।”

কোরবান আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিন বছর আগে তার স্ত্রীর ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে। তারপর থেকে তিনি অসুস্থ।

দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে আলী রেজা দ্বিতীয়। তার বড় ভাই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এখন চাকরির খোঁজে আছেন, আর তিনি একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সম্পন্ন করেছেন এবং ছোট বোন একটি স্কুলের শিক্ষার্থী।

আলী রেজার অভিযোগ, গত ৫ এপ্রিল বিকালে ইফতার আনতে যাওয়ার পথে স্থানীয় ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ কিছু সদস্য তাকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করে। এটা দেখে তার বাবা কোরবান আলী বাসা থেকে নেমে আসেন ছেলেকে বাঁচাতে। এসময় বখাটেরা কোরবান আলীর মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করে।

সংজ্ঞাহীন অবস্থায় কোরবান আলীকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়েছিল, অবস্থার অবনতি হওয়ায় প্রয়োজন হয় আইসিইউ সাপোর্ট। পরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে।

আলী রেজার ভাষ্য, গত ৬ ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিবেশী এক স্কুল শিক্ষার্থীসহ দুই জনকে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মারধর করার সময় আলী রেজা এগিয়ে গিয়েছিলেন তাদের রক্ষা করতে। এজন্য তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা নিয়েছিলেন।

তিনি জানান, হামলাকারীরা স্থানীয় গোলাম রসুল নিশানের অনুসারী। যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটকের পর দুই স্কুল শিক্ষার্থীকে রক্ষা করেছিল। এজন্য ওইদিন রাতেই গোলাম রসুল নিশান তাদের বাসায় গিয়ে হুমকি দিয়ে এসেছিলেন। এর প্রতিশোধ নিতে দুই মাস পর আলী রেজার ওপর হামলা করেছিল বখাটেরা।

হামলার ঘটনায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে গত ৬ এপ্রিল আকবর শাহ থানায় আলী রেজা একটি মামলা করেছেনন। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

কোরবান আলীর মৃত্যুর পর পুরো পরিবার এখন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে।

আলী রেজা বলেন, “বাবা নাই, সবকিছুতে বাবা এগিয়ে আসত। হামলাকারীদের সাথে রাঘব বোয়ালরা জড়িত। সেজন্য আতঙ্কে আছি।”

গত বুধবার কোরবান আলীর মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ এটি নিয়ে কাজ করছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

সিএমপি কমিশনার বলেন, “আমাদের কাছে ফুটেজ চলে এসেছে, বাকি আসামিদের ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমি এটা বলতে চাই, যারা এ ধরনের অপরাধজনক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকবেন, তিনি কিশোরই হোন কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সের হোন না কেন- সবাই আইনের আওতায় আসবে।”