বাংলাদেশে মুক্তির অপেক্ষায় ক্রেইগ অভিনীত শেষ বন্ড সিনেমা ‘নো টাইম টু ডাই’

'নো টাইম টু ডাই'-এর একটি দৃশ্য। 

সুপ্রভাত ডেস্ক »

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে থিয়েটারগুলো বন্ধ থাকায় এবং কোভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে ‘নো টাইম টু ডাই’ মুক্তির তারিখ তিন বার পিছিয়ে যায়।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে ‘বন্ড’, অর্থাৎ ড্যানিয়েল ক্রেইগ হাজির হয়েছিলেন নজরকাড়া গোলাপীরঙা ভেলভেট ডিনার জ্যাকেটে। অন্যান্য কলাকুশলীদের মধ্যে রামি মালেক, লাশানা লিঞ্চ এবং লিয়া সেঁডু তো ছিলেনই। সিনেমাটির সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যাশা, ক্রেইগ অভিনীত শেষ বন্ড চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আবারও মহামারির আগের সময়কার দর্শক-উন্মাদনা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

২৫তম বন্ড চলচ্চিত্র, ‘নো টাইম টু ডাই’ মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের এপ্রিলে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে থিয়েটারগুলো বন্ধ থাকায় এবং কোভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে ছবিটি মুক্তির তারিখ তিন বার পিছিয়ে যায়।

২০০৬ সালে ‘ক্যাসিনো রয়্যাল’ দিয়ে ব্রিটিশ সিক্রেট এজেন্ট ‘জেমস বন্ড’ হিসেবে যাত্রা শুরু করেন খ্যাতনামা অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেইগ। ইউনিভার্সাল পিকচারস এবং হলিউডের বিগ ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর একটি, এমজিএম ফিল্ম এর হাত ধরে ১৫ বছরের সুদীর্ঘ যাত্রার ইতি টানলেন ক্রেইগ। তাই স্বভাবতই, ‘নো টাইম টু ডাই’ নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ তুঙ্গে।

২০০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের চলচ্চিত্র, ‘নো টাইম টু ডাই’ এ দেখা যাবে, বন্ড জ্যামাইকা থেকে অবসর ভেঙে চলে এসেছেন, নতুন এক ভিলেনকে খুঁজে বের করতে। আর এই দুশ্চরিত্র ও শয়তান ভিলেনের ভূমিকায় রয়েছেন অস্কারজয়ী অভিনেতা রামি মালেক।

সিনেমার পরিচালক ক্যারি ফুকুনাগার মতে, “সবচাইতে কঠিন ব্যাপার ছিল একটা ভালো চিত্রনাট্য তৈরি করা। আমি এই ছবিটিকে একটা বইয়ের শেষ চ্যাপ্টার হিসেবে দেখি, যে বইটা শুরু হয়েছিল ক্রেইগের ‘ক্যাসিনো রয়্যালে’র গল্প দিয়ে; এবং এই সবকিছু একই গল্পের অন্তর্গত”।

ছবিতে নতুন জিরো জিরো এজেন্ট ‘নোমি’ হিসেবে পর্দায় দেখা যাবে লাশানা লিঞ্চকে। লিঞ্চ বলেন, “আমি খুশি যে অবশেষে আমরা ছবিটা শেষ করেছি এবং এখানে চমৎকারভাবে তা উদযাপন করছি।”

অ্যালবার্ট হলে বন্ড ছবির প্রিমিয়ারে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনের প্রিন্স চার্লস, তার ছেলে উইলিয়াম এবং তাদের স্ত্রীরা। মহামারিকালে ফ্রন্টলাইনে কাজ করায়, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে স্বাস্থ্যকর্মী ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

সাবেক বন্ড অভিনেত্রী জুডি ডেঞ্চ এবং গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডজয়ী গায়িকা, বিলি আইলিশও ছিলেন প্রিমিয়ারে। বিলি আইলিশ সিনেমার থিম সংটি গেয়েছেন।

চলতি সপ্তাহে আবার কোথাও কোথাও আগামী সপ্তাহেই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের সিনেমা হলে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘নো টাইম টু ডাই’কে মনে করা হচ্ছে এই মৌসুমের সবচাইতে প্রত্যাশিত চলচ্চিত্র।

‘স্পেকট্রা’তে ম্যাডেলিন সোয়ানে’র ভূমিকায় অভিনয় করা, লিয়া সেঁডু বলেন, ‘আমি জানি, গোটা দুনিয়া এই ছবিটির জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা এর পেছনে সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়েছি… এবং আমি আশা করছি, মানুষ ছবিটি পছন্দ করবে।”

২০১৫ সালের ‘স্পেকট্রা’ এবং ২০১২ সালের বন্ড চলচ্চিত্র ‘স্কাইফল’ এর বৈশ্বিক আয় ছিল যথাক্রমে ৮৮০ মিলিয়ন ডলার এবং ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। তাই ‘নো টাইম টু ডাই’ নিয়েও সবার প্রত্যাশার পারদ অনেক উঁচুতে।

ক্রেইগের শেষ বন্ড চলচ্চিত্রকে ফাইভ স্টার রিভিউ দিয়েছেন ‘দ্য টাইমসে’র কেভিন মাহের। রিভিউতে তিনি বলেন, ‘এটা ভালোর চেয়েও বেশি কিছু। এ এক দুর্দান্ত সিনেমা। ছবির ওপেনিং ফ্রেম থেকে ধরে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ক্রেইগ তার ক্যারিশমা দেখিয়েছেন। চমৎকার, অসাধারণ স্টাইল দেখা গেছে তার মধ্যে।’

‘দ্য গার্ডিয়ানে’র পিটার ব্র্যাডশও ছবিটিকে ফাইভ স্টার রিভিউ দিয়েছেন। তিনি ‘নো টাইম টু ডাই’কে ‘এপিক বার্নস্টরমার’ বলে উল্লেখ করেন; যেখানে অ্যাকশন, ড্রামা, উদ্দীপনা, ক্যাম্প কমেডি, হৃদয়ভঙ্গ, ভয়াবহতা ও অদ্ভুত-বোকা বোকা পুরনো আমলের অ্যাকশন সবকিছুই আছে।

‘নো টাইম টু ডাই’-এর একটি পোস্টার।

এদিকে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের স্টেফানি জাকারেক সিনেমাটি নিয়ে বেশ ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করলেও দৈর্ঘ্য বাড়ানো নিয়ে বেশ নাখোশ।

“তবে সেসব বাদ দিন। ‘নো টাইম টু ডাই’-এ কিছু খুঁত থাকা সত্ত্বেও এই ছবির বন্ড (ক্রেইগ) আমার চোখে ‘সেরা বন্ড’ এবং তিনি তার কাজটা শতভাগ ফুটিয়ে তুলেছেন,” যোগ করেন ওই সমালোচক।

একাধিক রিভিউতে সিনেমার নতুন চরিত্রগুলোরও প্রশংসা করা হয়েছে। ‘নেক্সট বেস্ট পিকচারসে’র জশ পারহাম নতুন এজেন্ট লাশানা লিঞ্চের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, ‘ছবিতে আসল চমক দেখিয়েছেন লাশানা। তিনি নিজেকে অবিশ্বাস্যরকম সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।’

সূত্র : টিবিএস