বাঁধের দাবিতে সাংসদের অভিনব প্রতিবাদ : উপকূল রক্ষায় মহাপরিকল্পনা নিন

উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এসএম শাহজাদা যে অভিনব পন্থায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন, আমাদের সংসদীয় সংস্কৃতিতে তা একটি বিরল ঘটনা। ‘আর কোনো দাবি নাই, ত্রাণ চাইনা, বাঁধ চাই’- এমন দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে গত বুধবার সংসদে আলোচ্য সংসদ সদস্য বক্তৃতা দিয়েছেন। তাঁর বক্তৃতা ও প্ল্যাকার্ড চিত্র সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদ মাধ্যমে বেশ আলোচিত হয়েছে। এলাকার মানুষের প্রশংসাও পেয়েছেন সাংসদ এমন ব্যতিক্রমী পন্থায় দাবি জানানোয়।
সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’র তীব্রতা আমাদের এখানে দেখা না গেলেও জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয়ে বসতঘর ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বিশেষ করে দ্বীপাঞ্চল, চরাঞ্চল, উপকূলীয় এলাকা জলোচ্ছ্বাসে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইলা, সিডরের ক্ষত নিয়ে দিন গুজরান করছে বৃহত্তর খুলনাÑবরিশালের দরিদ্র মানুষ। চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন দ্বীপ এলাকা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে, এটি সাংবৎসরিক চিত্র। ভাঙনের ফলে দ্বীপগুলির আয়তন কমে আসছে, বারবার বসতঘর স্থানান্তর করলেও রক্ষা নেই, অবশেষে ভিটেমাটি, সহায় সম্বল হারিয়ে অসহায় মানুষ শহরে বন্দরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বন্যা, নদীভাঙনেও বৃহত্তর চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা প্রতি বছর ডুবে যায়।
দেশের উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ বেড়িবাঁধ বিগত শতকের ষাটের দশকে নির্মিত, এসব বাঁধের টেকসই সংস্কার প্রয়োজন, সেই সাথে অরক্ষিত এলাকায়, বন্যা ও নদীভাঙনে নতুন এলাকায় বাঁধ নির্মাণ জরুরি। আলোচ্য সাংসদ তাঁর এলাকার কথা বললেও সমগ্র বাংলাদেশের উপকূলীয় ও নদীভাঙন এলাকার জন্য তা প্রযোজ্য। বেড়িবাঁধের মতো স্থাপনা নির্মাণ, সংস্কার ও বন্যার হাত থেকে জনপদ রক্ষার দায়িত্ব, পানি সম্পাদ মন্ত্রণালয়ের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ক্ষেত্রে জনগণের অভিযোগও বিস্তর। প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন ও বরাদ্দ পেতে দীর্ঘসময় চলে যায়, তার ওপর আছে আমলাতান্ত্রিক জট। শুকনো মৌসুমে প্রকল্পের কাজ হাতে নিলে সুফল কিছুটা পাওয়া যায়। বর্ষা সামনে রেখে প্রকল্প বাস্তবায়নে উপযোগিতা তেমন পাওয়া যায়না। টেকসই বাঁধ নির্মাণ, নদীশাসন, নদীর গতিপ্রকৃতি অনুধাবনÑএসব ক্ষেত্রে কেবল প্রকৌশলী নয়, বিশেষজ্ঞ, গবেষক, পরিবেশ ও প্রযুক্তিবিদের অভিমতও প্রয়োজন। গবেষণার কাজকে গুরুত্ব দিতে হবে। এলাকার সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধিরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে সব প্রকল্প হাতে নেওয়া প্রয়োজন সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারেন। মোট কথা সঠিকভাবে প্রকল্প প্রণয়ন ও বরাদ্দ না পেলে বাস্তবায়ন কাজ বিলম্বিত হয়, জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে।
আমরা মনে করি, দেশের উপকূলীয় এলাকার জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া প্রয়োজন। জলবায়ু ঝুঁকি প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়া করছেÑএই বিষয়টি সকলকে উপলব্ধি করতে হবে। উপকূলীয় এলাকার ৩ কোটি মানুষের জীবনÑজীবিকা এর সাথে জড়িত, তাছাড়া বন্যা নদীভাঙনের মতো নিত্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই। বাঁধ ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও টেকসই হতে হবে, মাঠ পর্যায়ে নজরদারি যথাযথ না হলে জনগণের অর্থের কেবল অপচয়ই হবে, তারা কোনো সুফল পাবে না।