বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

১৯৮৫ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরে ৩৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। একইদিন উপকূলীয় জেলাগুলোতে হয়েছিল ৩০০ মিলিমিটারের ওপরে। এর দীর্ঘ ৩৮ বছর পর গত রোববার এমন প্রবল বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। এদিন চট্টগ্রামে ৩২২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। আর সোমবার বান্দরবানের বৃষ্টি চট্টগ্রামকেও ছাড়িয়ে গেছে। সেদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ওই পার্বত্য জেলায় ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ি এলাকা থেকে উপকূলীয় জনপদে একযোগে এমন প্রবল বৃষ্টি খুব কমই দেখা যায়। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে বর্ষার এমন রূপ দেখা গিয়েছিল। ১৯৮৩ সালের ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল । ওই দিন ৫১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একই বছরের ৫ জুলাই ৪০৭ মিলিমিটার, ১৯৮৫ সালের ৯ জুলাই ৩৭৪ ও ১৯৮৮ সালের ৮ জুলাই ৩০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
তবে চট্টগ্রামে আগের দিনের চেয়ে সোমবার বৃষ্টিপাত কমেছে। সেটিও সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৪ মিলিমিটার। এই পরিস্থিতিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর দিয়েছে। সারা দেশে আগামী দুই-তিন দিন বৃষ্টি কমতে পারে। কিন্তু এরপর শনিবার থেকে আবারও প্রবল ধারায় বৃষ্টি শুরু হতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে তারা।
মে, জুন ও জুলাই মাসে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত হয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে রীতিমতো খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। জুলাইতে মৌসুমি বায়ু আসার পরেও বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়নি; বরং জুলাইয়ে অর্ধেক সময় জুড়ে দেশের কোথাও না কোথাও তাপপ্রবাহ ছিল। টানা ওই উষ্ণতার কারণে উল্টো প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। সাগর ও নদীর পানি উত্তপ্ত হয়ে মেঘ বেড়ে যায়। ফলে গত রোববার থেকে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়।
এর মধ্যে বান্দরবানের পর চট্টগ্রামের সাথে কক্সবাজারের যান চলাচলও মঙ্গলবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে যোগাযোগের দুটি সড়কই পানিতে তলিয়ে গেছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে বেশকটি উপজেলায়। ইতিমধ্যে গ্রাম থেকে নগরে আসার উপায় সীমিত হয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে ক্ষেতের ফসল, ডুবে গেছে বাড়ি-ঘর,ভেসে গেছে পুকুর-দীঘি। এই বন্যা দীর্ঘায়িত হলে মানুষের দুর্দশা আরও বাড়বে। বন্যার প্রভাবে শাকসবজিসহ কৃষিপণ্যের দাম বাড়বে আরেক দফা।
এই অবস্থায় সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে রিলিফসহ সকল ধরনের সহযোগিতা নিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। সে সঙ্গে রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলোকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে সাধারণ মানুষের দুর্দশা কমানোর চেষ্টা করতে হবে।