বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনায় ছিল রাষ্ট্রনীতি অর্থনীতি সমাজনীতি

চবিতে সেমিনারে শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষকরা রাজনীতিবিদদের দ্বারে
গিয়ে বসে থাকেন। এর চাইতে লজ্জার
আর কি হতে পারে : মুনতাসীর মামুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, আমি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। এই একটা কথার মধ্যে ও তাঁর চিন্তা-চেতনায় ছিল রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনীতির শুরুর দিক থেকেই একটি স¦াধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন।
গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী এ কথা বলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষার যথেষ্ট আধুনিকায়ন হয়েছে, কিছুদিন আগে ঢাকায় মাদরাসা শিক্ষার্থীদের একটি বিজ্ঞান মেলার আয়োজন করা হয়। যেখানে ৮৬টি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা তাদের প্রজেক্ট প্রদর্শন করে। তাদের সেসব কাজে সমাজ সচেতনতার পরিচয় পাওয়া যায়। কাজগুলো দেখে আমি অভিভূত হই। মাদরাসা শিক্ষায়ও বিভিন্ন ধরন রয়েছে। কওমি মাদরাসায় এক ধরনের সিস্টেম, আবার অন্য মাদরাসাগুলো সরকারি বিধি অনুযায়ী পাঠ্যক্রম পরিচালনা করছে। ’
তিনি ইংরেজি ভাষা ও শিক্ষা প্রসঙ্গে বলেন, ‘মাতৃভাষা যেমন শিখতে হবে, ইংরেজিও জানতে হবে। ইংরেজি ভাষা লাগবেই। সেই সাথে আইসিটি, উদ্যোক্তা হওয়ার জ্ঞান, কাজ অনুযায়ী মেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স গ্রহণ করতে হবে। সৃজনশীল ও প্রায়োগিক শিক্ষার সমন্বয় করতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষা যেন কর্মজগতের উপযোগী হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে আমাদের। অ্যাকাডেমিক মাস্টার প্ল্যান গড়ে তুলতে হবে। ’
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ নিতো, মাধ্যমিকের শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ নিতো, কলেজের শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ নিতো। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। কারণ সেরা ছাত্র মানেই সেরা শিক্ষক নয়।’
সেমিনারে মুখ্য আলোচক ইতিহাসবিদ বঙ্গবন্ধু চেয়ার মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকরা রাজনীতিবিদদের দ্বারে গিয়ে বসে থাকেন। এর চাইতে লজ্জার আর কি হতে পারে? আমাদের শিক্ষকরা চাকরি করেন, শিক্ষকতা করেন না। বঙ্গবন্ধু যেমন সাহসী ছিলেন, তার আদর্শের অনুসারী হয়ে সাহসী হতে হবে। মন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে দ্বিমত পোষণ করার সাহস থাকতে হবে। সেই আদর্শ ধারণ করতে না পারলে আসলে বঙ্গবন্ধুর যথার্থ অনুসারী হিসেবে আপনি নিজেকে দাবি করতে পারেন না। ভোটের জন্য হুজুর-নাজিরদের তোষামোদ করার প্রয়োজন নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে পদাধিকার বলে অনেকেই বুদ্ধিজীবী। সবাই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মাতামাতি করেন, সবাই বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। অথচ ৫২ বছরে এসেও অন্তত কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ থেকে অথবা সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন, আদর্শ ও কর্ম নিয়ে কোনো অভিসন্দর্ভ হয়নি। জাতীয় চার নেতাকে নিয়েও হয়নি।’
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষা এবং ভাষাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রজাতন্ত্রের ভাষা হোক বাংলা এটাই চেয়েছিলেন। বাংলাদেশে অর্ধ-শতাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শতাধিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয় হিসেবে বাংলা ও ইতিহাস নেই। এটাকে আমি দেশদ্রোহিতা মনে করি। বঙ্গবন্ধুকে জানুক এটা চাইবেন অথচ ইতিহাস বিষয়টাই রাখবেন না তা কিভাবে হয় ?’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতা চেয়েছিলেন, তাই বলে ধর্মের বিরোধিতা করেননি। তিনিই ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন।
চবি ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য এবং জেনিটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার। এছাড়া চবির উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. বেনু কুমার দে, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকি এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুুল হক বক্তব্য রাখেন।