বই পড়ার সুঅভ্যাস শিশু-কিশোরদের মেধা বিকাশে সহায়ক

মো. মহসীন »

শিশুকাল থেকেই শিশু- কিশোরদের স্কুল পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি কিছু ভালো সহজবোধ্য বই পড়ার প্রতি আগ্রহী ও অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। এটি তাদের মেধা ও জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রে অনেক সহায়ক হতে পারে , এই ক্ষেত্রে শিশু কিশোররা বাস্তব জীবনের কিছু কিছু ভালো মন্দের দিক, অনেক অজানার খুঁটিনাটি বিষয়ে সম্যক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পায়। এছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য উপযোগী বইগুলো নিয়ে দেশে শিশু বইমেলার আয়োজন করা হয়। এক্ষেত্রে মেলা আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে বইয়ের সঙ্গে শিশুদের ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করে দেওয়া, যাতে বই পঠনের প্রতি আত্মিক যোগসূত্রের সম্পর্ক গড়ে উঠে । শিশুÑ কিশোররা অজানা বিষয়ের প্রতি বেশ কৌতূহল অনুভব করে। যদি শিশুরা জানার মনোবৃত্তি নিয়ে কোন কৌতূহল পোষণ করে,তাও বিভিন্ন বইপুস্তক পাঠ করলে সেই বিষয়ে তাদের পরিষ্কার ধারণা জন্মানো সহায়ক হয়ে থাকে । পুস্তক পাঠে শিশু কিশোরদেরকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো নিয়ে উৎসাহ যোগাতে পারলে সেটা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ঠেকানোয় বুদ্ধিমত্তা বিকাশের স্বচ্ছ মনোবৃত্তি গড়ে উঠতে সহায়ক হয় এবং ভবিষ্যতে আলোকিত জীবনের পথ তাদের জীবনকে অনেক দূর এগিয়ে নেওয়ার অনেক সহায়ক হয় । পঠন পাঠন তাদের মেধার পরিধির বিকাশ ঘটায় ফলে শিশু কিশোররা সমাজে বিরাজমান বিবিধ কুসংস্কার ও যে কোন অসামাজিক কার্যকলাপের নেতিবাচক দিকগুলো উপলব্ধি করতে পারে। তাদেরকে যদি রূপকথা,আরব্য রজনীর গল্প, কৌতুক বই পড়ার অভ্যাস ও আগ্রহ সৃষ্টি করা হয়,সেক্ষেত্রে কিছু আনন্দবোধ আর মনে ভীতিকর মানসিকতা সৃষ্টি ছাড়া আর কোনভাবে তেমন উপকার হয় না। একসময় তারা বাস্তব জীবনের চলার পথে বিভিন্ন কুসংস্কারমূলক চিন্তাধারায় আবদ্ধ হয়ে পড়তে পারে।
তাই উন্নত জীবন গড়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বইগুলো তারা ক্রমান্বয়ে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সচেষ্ট হলে ভবিষ্যত শিক্ষা জীবন তাদের কাছে নিঃসন্দেহে অনেক সহজতর হয়ে উঠবে। এমনকি নানাধরণের কুসংস্কার মুক্ত হয়ে ভবিষ্যৎ জীবনে তারা সঠিক শুদ্ধ জীবনের ভিত নির্মাণে এগিয়ে যাবে। আর এর সাথে দেশের ইতিহাসও ঐতিহ্য বিষয়ক বই ভাল করে রপ্ত করে রাখাটা সুস্থ ক্যারিয়ার ও সভ্য নাগরিক গঠনে বিশেষ সহায়ক হয় ।
আমরা বলে থাকি, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আগামী দিনে শিশুদের উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণে তাদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে, মেধা-মননে পারদর্শী করে তোলাটা অপরিহার্য। বিশ্বে টিকে থাকার ক্ষেত্রে দরকার হলো আলোকিত মানবজাতি। পরিপূর্ণভাবে আলোকিত মানুষ গড়তে বইয়ের পঠনের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি এবছরের বইমেলা উদ্বোদন কালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু কিশোরদের বই পড়ার প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই বয়স ও যুগোপযোগী বই যদি শিশুর হাতে তুলে দেয়া যায়, তাহলে তা অবশ্যই তাদের মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তির পরিপূর্ণ বিকাশের অধিক ভূমিকা রাখবে। দেশে এমন একটা সময় ছিলো যখন কোন উৎসবে বই উপহার দেয়ার কদরটাই ছিলো বেশি। অনেক পরিবারের ড্রইং রুমে বইয়ের একটা আলমারি ঘরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতো। মা-বাবারাও কোনো উৎসব বা জন্মদিনে তাঁদের সন্তানদের বই উপহার দেয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। এতে ছোটবেলা থেকেই শিশুরা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার ব্যাপারেও বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠতো। অতএব, একেবারে ছোটবেলাতেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলাটা অনেক বেশি কার্যকর। এ জন্য পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়োজন রয়েছে, বিশেষত এক্ষেত্রে পরিবারের মা’রা অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে । কারণ, পরিবারই হচ্ছে শিশুর প্রথম বিশ্ব ও প্রথম বিদ্যাপীঠ। মা হচ্ছেন তাদের কেন্দ্রবিন্দু।
এছাড়া শিক্ষকদের সচেতনতা এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে, যাতে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শিশুরা অন্য বই পড়ার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠে । অতএব শিশু কিশোরদের সৃজনশীল মননশীলতা গড়ে তোলার জন্য বই পড়ার অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ, তারাই ভবিষ্যতে সুস্থ সমাজ গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক