ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে কাদের ইঙ্গিতে

বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্যমতে, চলতিবছর সেপ্টেম্বর মাসে ৪০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৭ জন নিহত, ৬৫১ জন আহত হয়েছে। একই সময় রেলপথে ৪৯টি দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত, ২৬ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৬ টি দুর্ঘটনায় ২৮ জন নিহত, আহত ৪ জন এবং ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪৬৭ টি দুর্ঘটনায় ৪৯৬ জন নিহত এবং ৬৮১ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭২ জন নিহত, ১০৭ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩৮.০৫ শতাংশ, নিহতের ৪২.৭৮ শতাংশ ও আহতের ২৬.৬১ শতাংশ। সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও প্রশিক্ষণহীন অদক্ষ চালক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফেলতিকে।
আগস্ট মাস পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৫৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮টি। যা ২০১০ সালে ছিল ১৪ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৮টি। হিসেব অনুযায়ী, গত এক যুগে (২০১০-২৩) নিবন্ধিত যানবাহন বেড়েছে ৪৪ লাখ ৯হাজার ৬৯০টি। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত গাড়ির মধ্যে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ যানবাহনের ফিটনেস নেই । ফিটনেস সনদ হালনাগাদের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নিয়মিত করছেন না বাস মালিকরা। সংস্থাটির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সুপ্রভাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত ১২ বছরে দেশে ৪৪ লাখেরও বেশি গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত যে এই ১২ বছরে ৪৪ লাখ চালক কোথাও প্রশিক্ষণ নেয়নি। এতজনকে ১২ বছরে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো ব্যবস্থাও নেই বাংলাদেশে। তাহলে এই গাড়িগুলোর স্টিয়ারিং কাদের হাতে তুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
ফিটনেসবিহীন গাড়ি খুঁজে বের করা তো মশা খুঁজে বের করার মতো কঠিন নয়। এ গাড়িগুলো আমাদের-আপনাদের এবং বিআরটিএ-র কর্মকর্তাদের চোখের সামনেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কর্তৃপক্ষ চায় না বলে গাড়িগুলো ধরা হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে নিশ্চয়ই বন্ধ হবে চলাচল।
কী পরিমাণ ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল করে তার প্রমাণ হলো যখনই দুর্ঘটনা ঘটে তখনই জানা যায় গাড়িটি ছিল চলাচল অনুপযোগী। চালকের বৈধ কাগজপত্র ছিল না। সেটা শুধু সড়কে নয়, নৌপথেও একই চিত্র।
বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার চিত্র হতাশাজনক। দুর্ঘটনারোধে দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক তৈরি করা এবং সড়কে ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলতে না দেওয়ার দাবিটি বহু পুরনো এবং সর্বজনীন হলেও তা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। পরিবহনখাত যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারা এতই শক্তিশালী যে সরকার এত বছরেও পরিবহনখাত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অধীনে আনতে পারেনি। তবে এই অবস্থা আর কতদিন চলবে তা জানতে চায় সাধারণ মানুষ।