‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন’ সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ

সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩’র খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত এই আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ অথবা একই পরিবারের সদস্যরা কোম্পানির ১৫ ভাগের বেশি শেয়ার কিনতে পারবেন না। বর্তমানে যাদের শেয়ার ১৫ শতাংশের বেশি আছে, সে বিষয়েও প্রস্তাবিত আইনে করণীয় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এই আইন কার্যকরের দুই বছরের মধ্যে অতিরিক্ত শেয়ার পরিবারের সদস্য নয় এবং ওই কোম্পানিতে শেয়ারের সর্বোচ্চ সীমা ধারণ করেন না, এমন ব্যক্তিদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। যদি না করা হয়, তাহলে ওই শেয়ার সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে। পরিবারের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। পরিবার বলতে স্ত্রী বা স্বামী, পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, ভাইবোন এবং ওই ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল সবাইকে বোঝাবে। প্রস্তাবিত আইনে দু’জন স্বতন্ত্র পরিচালকসহ ১৫ জন পরিচালক থাকা যাবে। আইনে বিভিন্ন অপরাধের সাজাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
এই আইন আর্থিক খাতকে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও দুর্নীতিমুক্ত করতে কঠোর ভূমিকা রাখবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমন আইন আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। তবে একদম না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াকে ভালো বলব আমরা। বর্তমান সরকারের সময়ে নজিরবিহীন উন্নতি হয়েছে তা নিয়ে কোনো বিতর্ক করার অবকাশ নেই। কিন্তু আর্থিক খাতে এমন কিছু অনিয়ম হয়েছে তা অবিশ্বাস্য। তারপরও আমাদের শেষ প্রত্যাশার জায়গা ছিল প্রধানমন্ত্রীর ওপর। অনেকে ভেবেছেন তিনি শেষ পর্যন্ত লাগাম টেনে ধরবেন। কাজেই এই আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি খুব দ্রুত এটা সংসদে পাশ হয়ে আইনে পরিণত হবে।
এক্ষেত্রে আরও একটি শংকার কথা না বললেই নয় তাহলো, দেশে অনেক কঠিন ও বাস্তবমুখী আইন আছে কিন্তু তার প্রয়োগে একপ্রকার গড়িমসি থাকে। এক্ষেত্রে যেন তা না ঘটে।
একই সভায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা যেন আরও বেশি উন্মুক্ত হয়, আরও বেশি অবাধ হয়- সেটি নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিছু কোম্পানির সামর্থ্য নেই, কিন্তু তারাও কাজ পেয়ে যাচ্ছে। এতে কাজের বিলম্ব হচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধানের পরিবর্তন আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আমরা অতীতেও দেখেছি সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী অনেক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু সেসব নির্দেশনা কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা সঠিকভাবে মনিটরিং না হওয়ায় কার্যকর হয় না। প্রধানমন্ত্রী অনেককিছু লক্ষ্য করেন। যেমন, শিশুদের ঘাড়ে বইয়ের চাপ কমানোর মতো মানবিক আহ্বানও তিনিই করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সে নির্দেশ একপ্রকার উপেক্ষিত হয়েছে। শিশুদের ঘাড় থেকে বইয়ের বোঝা কমেনি।
যুগের প্রয়োজনে নতুন আইন হবে। সে আইনকে মান্য করার পরিবেশও গড়ে তুলতে হবে।