প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন ঋষি সুনাক

সুপ্রভাত ডেস্ক »

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পর পেনি মর্ডান্টও কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের সম্ভাব্য লড়াই থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলটির নেতা নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। এর মধ্য দিয়ে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন তিনি। মাত্র সাত সপ্তাহ আগে কনজারভেটিভ দলের নির্বাচনে লিজ ট্রাসের কাছে হারের পর এবার তিনি জয়ী হলে ফিরে এলেন। খবর বিডিনিউজের।

ইতিহাস সৃষ্টি করে যুক্তরাজ্যের প্রথম এশিয়ান এবং এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে মাত্র ৪২ বছর বয়সে সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীও হচ্ছেন সুনাক। তার প্রতিদ্বন্দ্বী পেনি মর্ডান্ট সোমবার এক বিবৃতিতে নাম প্রত্যহারের ঘোষণা দেন।

এর পরপরই কনজারভেটিভ পার্টির ১৯২২ কমিটির প্রধান গ্রাহাম ব্রাডি বলেন, সুনাক হচ্ছেন দলের নতুন নেতা এবং নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার সুনাককে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

সুনাক টোরি (কনজারভেটিভ) এমপি’দের অর্ধেকেরও বেশি জনের সমর্থন পেয়েছেন। অন্যদিকে, পেনি মর্ডান্ট এমপি’দের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ১০০ সমর্থন জোগাড় করতে না পেরে প্রতিযোগিতা থেকে সরে যান। এক বিবৃতিতে সুনাককে পূর্ণ সমর্থন দেন তিনি।

বিবৃতিতে মর্ডান্ট বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। এর মধ্য দিয়ে আবারও আমাদের দলের বৈচিত্র্য এবং প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ঋষির প্রতি আমার পূর্ণ সমর্থন আছে।’

সুনাক যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন, তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। লড়াই থেকে বরিস জনসন সরে যাওয়ার পর কার্যত নিয়মরক্ষার লড়াই ছিল সুনাকের। কারণ, মরডান্টের পক্ষে ১০০ এমপি’র সমর্থন জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তিনি সরে যেতেই নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে ঋষি সুনকের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। দেশে গভীর বিভক্তি এবং অর্থনীতিতে মন্দার একটি সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলেছেন।

প্রায় দু’মাস আগেই যুক্তরাজ্যে এক কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসনকে ডাউনিং স্ট্রিট ছেড়ে যাওয়া এবং আরেক কনজারভেটিভ নেতা লিজ ট্রাসকে সেই জায়গায় আসতে দেখা গেছে। এবারও দেখা যাবে সেই একইরকম পট পরিবর্তন।

বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস রাজা চার্লসের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। আর সুনাককে নতুন সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাবেন চার্লস। সেটি কখন হবে তা এখনও জানা নেই। তবে বাকিংহাম প্রাসাদেই এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

এক নজরে ঋষি সুনাক
ক্সগতবারের কনজারভেটিভ নেতা নির্বাচনের সময় লিজ ট্রাসের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সমস্যা ডেকে আনতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন ঋষি সুনাক। বিষয়টি নিয়ে ট্রাসের সঙ্গে বিরোধেও জড়িয়েছিলেন তিনি।

ক্সসুনাক অভিবাসী দম্পতির ছেলে। তার বাবা-মা যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন পূর্ব আফ্রিকা থেকে। দুইজনই ছিলেন ভারতীয় বংশদ্ভূত। ১৯৮০ সালের ১২ জুন ইংল্যান্ডের সাউথহ্যাম্পটনে জন্ম সুনাকের। তার বাবা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের জেনারেল প্র্যাক্টিশনার ছিলেন। আর মায়ের নিজস্ব ওষুধের দোকান ছিল।

ক্সমাত্র ৭ বছর তিনি এমপি ছিলেন। প্রথম ২০১৫ নর্থ ইয়র্কশায়ারে রিচমন্ড থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন সুনাক। তারপর দ্রুতই তার উত্থান ঘটে। ২০২০ সালে বরিস জনসনের আমলে তিনি অর্থমন্ত্রী বা চ্যান্সেলর হন।

ক্সকোভিড মহামারীতে লকডাউনের কঠিন সময়ে চ্যান্সেলর হিসাবে ঋষি সুনাক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি রেস্তোঁরাগুলোর জন্য ‘ইট আউট টু হেল্প আউট’ স্কীমও চালু করেছিলেন।

ক্সসুনাককে সবচেয়ে ধনী এমপি’দের একজন বলেই মনে করা হয়। সুনাকের স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি হচ্ছেন, ভারতীয় ধনকুবের নারায়ণ মূর্তি এবং সুধা মূর্তির মেয়ে। ২০০৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় অক্ষতার সঙ্গে প্রথম দেখা হয় সুনাকের। পরবর্তীতে তারা বিয়ে করেন। তাদের দুই মেয়ে আছে। সুনাক বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ড স্যাকসে কাজ করেছেন। দ্য সানডে টাইমসের ধনীর তালিকার হিসাব মতে, সুনাক এবং অক্ষতা ৭৩ কোটি পাউন্ড সম্পত্তির মালিক।