পিছিয়ে যাচ্ছে সংস্কার কাজ

কালুরঘাট সেতু

নিজস্ব প্রতিবেদক »

রেল যোগে কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা প্রায় শেষ। সেপ্টেম্বরে কক্সবাজার রুটে রেল চলাচলের উদ্বোধন করতে চায় সরকার। এর মধ্যে বাধা কেবল কর্ণফুলী নদীর কালুর ঘাট সেতু। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করে ১০ কিলোমিটার গতিতে। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আনা ট্রেনগুলো এ রুটে চলবে ৫০-৭০ কিলোমিটার গতিতে। এজন্য ২০ জুন সংস্কার কাজ শুরুর পরিকল্পনার কথা জানায় রেলওয়ে। তবে এ কাজ শুরু হতে আরও বাড়তি এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানান রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা।

রেল সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার রুটে চলাচলের জন্য আধুনিক উচ্চগতির ১৪৭টি মিটারগেজ কোচ আনা হয় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। এ কোচগুলো বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রায়াল রান করছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় চায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ রুটে রেল চলাচল উদ্বোধন করতে। ফলে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের রেলের ভাড়াও নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৫-১৬টি বগি নিয়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে পাওয়ার কার কোচ, কেবিন, এসি চেয়ার, এসি বার্থ, শোভন চেয়ার, গার্ড র‌্যাক, ব্যুফে কার সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথে বাকি রয়েছে আরও ১৫ কিলোমিটারের কাজ। এছাড়া কক্সবাজারে ছয়তলা বিশিষ্ট রেলস্টেশনের কাজ বাকি রয়েছে ১৪ শতাংশ। পাশাপাশি বাকি রয়েছে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ। যা দিয়ে চলাচল সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল। ফলে নতুন একটি সেতু নির্মাণের পূর্বে বর্তমান সেতুটি সংস্কার কাজের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

রেল প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলটিকে পরামর্শক হিসেবে রেখে ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগের কাজ শেষ হয়েছে। কাজ শুরুর প্রথমে ম্যাটারিয়ালস মোবিলাইজেশন, প্লেট সংস্কার ও বিটুমিন ঢালাই কাজ করা হবে। এ কাজ এক মাস চলবে। তবে প্লেট সংযোজন বা সংস্কারের কাজে আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে অর্থাৎ জুলাই থেকে রেল ট্রাফিক লিংকিংয়ের কাজ শুরু হবে। এ কাজটি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। এরপর মানুষ হেঁটে চলাচল করার জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে রেলওয়ে ট্রাফিক খুলে দেওয়া হবে। অক্টোবরে সেতুর ওপরের সড়ক কাজ সংস্কারের কাজ করা হবে। তবে এ কাজটি ২০ জুনে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শুরুর কোনো আলামত দেখছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এ নিয়ে কথা হয় পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ১৫ জুনে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা নিয়ে ঠিকাদার নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ গুছিয়ে নিয়েছি। ভেবেছিলাম, ২০ জুনে আমরা কালুরঘাট সেতু সংস্কারের কাজ শুরু করবো। কিন্তু নীতিগত কিছু সিদ্ধান্তের কারণে আমরা একটু পিছিয়ে পড়েছি। আশা করছি, কাজটি শুরু করতে নির্ধারিত সময়ের ৫ থেকে ৭ দিন বেশি সময় লাগবে। তবে দ্রুততার সঙ্গে সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করবো। আমাদের এ সংস্কার কাজের কারণে কক্সবাজার রুটের ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন বিঘিœত হবে না।’

অন্যদিকে কালুরঘাট সেতু সংস্কার কাজের সময়ে সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছিলো আগেই।

তৎকালীন প্রয়াত সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ তার সংসদীয় এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমাতে ফেরি চলাচলের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তার ডিও লেটার অনুযায়ী সার্বক্ষণিক চলাচলের জন্য দুইটি ও রিজার্ভে থাকার জন্য একটি ফেরি আনা হয়। কালুরঘাট সেতু সংলগ্ন ফরেস্ট অফিস এলাকায় ১৭ থেকে ২৪ ফুট প্রশস্তের রাস্তা ও ফেরি জেটি নির্মাণ করা হয়। তবে ফেরিতে বহন করা গাড়ির টোল নির্ধারণ না হওয়ায় ফেরি তিনটি অলস পড়ে আছে ফরেস্ট অফিসের ঘাটে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, ‘আমরা ফেরি যখন এনেছি তখনই টোল ফি নির্ধারণের জন্য একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। বেশ কিছু সময়ের পর এ প্রস্তাবনার রিভিউ হয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়সহ একটি মিটিংয়ে টোল ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু ওটা এখনো মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ আকারে আমাদের কাছে আসেনি। এখন অপারেটর নিয়োগের কাজটা বাকি। টোল ফি নির্ধারণের গেজেট আসতে আসতে অপারেটর নিয়োগ হয়ে যাবে। আশা করি, সব মিলিয়ে বেশিদিন সময় লাগবে না।’

প্রসঙ্গত, প্রাথমিকভাবে কক্সবাজার রুটে ভাড়া ঢাকা হতে নন এসি ৭০০-৮৫০ টাকা, এসি ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে সেমি ননস্টপের নন এসি ভাড়া ২০০ টাকা, এসি ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা ও লোকালের ভাড়া ৯০-১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে কেবিন ভাড়া এখনও নির্ধারণ হয়নি বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস দ্রুত সময়ের মধ্যে চালু করতে চায় রেলওয়ে। সেপ্টেম্বরে এ রুটে রেল চলাচল উদ্বোধন করে এক বা একাধিক ট্রেন চালানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে আশা করছি সবগুলো কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।’