পাহাড়ি উপত্যকায় ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প

শিল্পকারখানায় পানির সমস্যা দূর হবে : কেইপিজেড এমডি আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালুর সম্ভাবনা রয়েছে

ভূঁইয়া নজরুল »

৬৫ ফুট উঁচু দুই পাহাড়ের মাঝে গড়ে উঠছে ছয় কোটি লিটারের পানি শোধনাগার প্রকল্প। কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে পাহাড়ি উপত্যকায় (৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গায়) গড়ে তোলা প্রকল্পটি বোয়ালখালী ভান্ডালজুড়ি এলাকায়। এ প্রকল্প থেকেই বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা এলাকার শিল্প কারখানা ও আবাসিকে সরবরাহ করা হবে বিশুদ্ধ পানি। আগামী বছরের শেষ নাগাদ প্রকল্পটি চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।

গত সপ্তাহে প্রকল্প এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সংগ্রহের জন্য ইনটেক (যে পয়েন্ট দিয়ে পানি সংগ্রহ করা হবে) তৈরি করা হয়েছে। ইনটেক থেকে পানি সংগ্রহ করে বেসিনে (যেখানে পানি এসে জমা হবে) চলে যাবে। বেসিন থেকে পানি শোধনের বিভিন্ন পর্যায় (যেমন- ক্লারিফায়ার, সেন্ড ফিল্টার, ক্লোরিন মেশানো, কেমিক্যাল মেশানো প্রভৃতি কার্যক্রম) শেষে বিশুদ্ধ পানি জমা হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২২ ফুট উচ্চতার রিজার্ভারে। সেখান থেকে পাইপ লাইনে সরবরাহ করা হবে পানি। ইতিমধ্যে দেখা গেছে প্রকৌশলগত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষের পথে। বর্ষা শেষ হওয়ায় এখন দ্রুত চলছে নির্মাণ কার্যক্রম।

প্রকল্প থেকে পরিশোধিত পানি ১৩৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। এরমধ্যে বোয়ালখালীতে থাকছে প্রায় দুই হাজার আবাসিক সংযোগ। পানির এই পাইপ লাইন বোয়ালখালী মিলিটারি পুলের কাছে এসে দুই ভাগ হয়ে যাবে। একটি অংশ চলে যাবে আহলা দরবার শরীফ হয়ে পটিয়া পৌরসভায়। অপর অংশটি শিকলবাহা ও মইজ্যার টেক হয়ে কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় চলে যাবে। এজন্য তিন কোটি লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার এই ওভারহেড ট্যাঙ্ক ( জলাধার) নির্মাণ করা হচ্ছে, তা থেকে ১০ হাজার আবাসিক সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার। একইভাবে কর্ণফুলী ও আনোয়ারায়ও থাকছে আবাসিক সংযোগ। এজন্য কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে এক কোটি লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার একটি জলাধার। সেখান থেকে আনোয়ারা এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে। তবে আবাসিক সংযোগের চেয়ে শিল্প কারখানায় বাণিজ্যিক সংযোগের দিকে বেশি দৃষ্টি চট্টগ্রাম ওয়াসার। বোয়ালখালী, শিকলবাহা, কর্ণফুলী, পটিয়া ও আনোয়ারার শিল্পকারখানাগুলোতে পানির সঙ্কট রয়েছে। ইতিমধ্যে পটিয়া ছালেহ নূর কলেজ এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এজন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) উচ্চ আদালতে রিট করেছিল। সেই রিটে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে নিষেধ করার পাশাপাশি পানি রিচার্জ করতেও বলা হয়েছিল। এবিষয়ে কথা হয় বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়াদা রিজওয়ানা হাসানের সাথে। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই চট্টগ্রাম ওয়াসার এই উদ্যোগ পরিবেশ সহায়ক। সারাবিশ্ব পানির সমস্যা সমাধানে ভূপৃষ্ঠস্থ পানি ব্যবহার করে আসছে। এখন পটিয়াসহ পুরো শিল্প এলাকায় ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানি ব্যবহার করা হলে পানির দূষণ কমে আসার পাশাপাশি পরিবেশের উন্নতি ঘটবে, চাপ কমবে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্পের পরিচালক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘শহরতলীর উপজেলাগুলোতে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে এবং শিল্পকারাখানাগুলোতে পানি সরবরাহ দিতে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এরমাধ্যমে সিইউএফএল, কাফকো, কোরিয়ান ইপিজেডসহ (কেইপিজেড) শিল্প কারখানাগুলোকে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে হবে না। এতে পরিবেশের জীববৈচিত্র্য যেমন রক্ষা পাবে তেমনিভাবে মানুষও সুপেয় পানি পাবে। এতে এসব এলাকার জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।’

কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে মাহবুবুল আলম বলেন, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পানি সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। তবে আবাসিক পানির সংযোগ কার্যক্রম শেষ করতে আরো কয়েকমাস সময় লাগতে পারে। সে হিসেবে হয়তো ২০২৩ সালের মার্চ এপ্রিলের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করা যাবে।

ওয়াসার এই প্রকল্পে শিল্পকারখানাগুলো পানির সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে জানিয়ে কেইপিজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ওয়াসার এই উদ্যোগটা অবশ্যই পরিবেশের জন্য খুবই সহায়ক। একইসাথে শিল্পকারখানা ও আবাসিক এলাকাগুলো সুপেয় পানির সংস্থান পাবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার বোয়ালখালী ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। ২০১৯ সালে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। পরবর্তীতে গত বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ১৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্পের ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক, বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে দিচ্ছে ২০ কোটি টাকা।