পরীমনির রিমান্ড ইস্যুতে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন দুই বিচারক

চিত্রনায়িকা পরীমনি

সুপ্রভাত ডেস্ক

বাংলাদেশের সুপরিচিত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনায় হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন আদালতের দুই বিচারক।

সেই সঙ্গে পরবর্তী দুই বার রিমান্ড আবেদন করায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও।

দুই বিচারক তাদের ব্যাখ্যায় বলেছেন, যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে তারা এরকম ভুল করেছেন। তবে ভবিষ্যতে আর এরকম ভুল তার আর করবেন না বলে জানিয়েছেন।

আদালত এই বিষয়ে রায় ঘোষণার জন্য ২৫শে নভেম্বর তারিখ ঠিক করেছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ মিজানুর রহমান বিবিসিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এ. এস. এম. আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দুই ম্যাজিস্ট্রেটের আইনজীবী লিখিত ব্যাখ্যা পড়ে শোনান।

ক্ষমা প্রার্থনাকারী দুই বিচারক হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস এবং আতিকুল ইসলাম। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন কাজী গোলাম মোস্তফা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করার মামলায় পরীমনিকে মোট তিন দফা রিমান্ড দিয়েছিলো ঢাকার একটি আদালত।

কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড কেন দেয়া হয়েছিলো, হাইকোর্ট বেঞ্চ ২রা সেপ্টেম্বর একটি রুল জারি করে সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা জানতে চান। দুই বিচারকের ব্যাখ্যা ১৫ই সেপ্টেম্বর আদালতে উপস্থাপন করা হলেও তাতে হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হননি।

তাদের দ্বিতীয় দফার ব্যাখ্যা রবিবার হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোঃ মিজানুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, ”দুই বিচারক আদালতের কাছে ব্যাখ্যা দিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তারা বলেছেন, যেহেতু তারা নতুন, তাদের প্রপার ট্রেনিংয়ের অভাবে তারা ভুল করে ফেলেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল করবেন না। ভবিষ্যতে আদালতের কাজ করার ক্ষেত্রে এপেক্স কোর্টের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করবেন।”

”এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করে তাদের যেন নিঃশর্তভাবে ক্ষমা করে দেয়া হয়, সেই প্রার্থনা তারা করেছেন। আগামী ২৫শে নভেম্বর আদালত জাজমেন্টের জন্য রেখেছেন।”

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও আদালতে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বর্তমানে সিআইডি মামলাটির তদন্ত করছে।

মি. রহমান বলছেন, ”সেখানে তিনি বলেছেন, প্রথমে ডিবি রিমান্ডে নিয়েছিল। এরপর তাদের কাছে এটা ট্রান্সফার হয়। উনি রিমান্ডে নিয়েছেন। দ্বিতীয়বার রিমান্ডে গিয়ে পরীমনি কিছু তথ্য দিয়েছে, যেটা প্রথমবারের সাথে গরমিল হয়। এইজন্য থার্ড টাইম নিতে হয়েছে।”

”তবে এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সে যে ভুল করেছে, সেই জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে। সে বলেছেন যে, ভবিষ্যতে এরকম কোন তদন্তের ভার আসলে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করে সেগুলো করবেন। এবং আদালতের কাছে উনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।”

তার আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

গত ৪ঠা অগাস্ট বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে গ্রেপ্তার করেছিল র‍্যাব। সেই সময় ওই বাসা থেকে র‍্যাব বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধারের তথ্য জানায়। সেসময়ই তার বাসা থেকে গাড়ি, ল্যাপটপ, মোবাইলসহ ১৬টি জিনিস জব্দ করা হয়েছিল।

এরপর ওই মামলায় পরীমনিকে প্রথমে চারদিন, পরে আরও দুই দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

তার জামিনের আবেদন জানানো হলেও তিন সপ্তাহ পরে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হলে সেই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন পরীমনি। ২৬শে অগাস্ট শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়ে পহেলা সেপ্টেম্বর শুনানির দিন রাখেন।

তবে নিম্ন আদালত তার আগে জামিন শুনানির দিন এগিয়ে নিয়ে আসেন। ৩১শে অগাস্ট পরীমনির জামিন মঞ্জুর করা হলে পরদিন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

সূত্র : বিবিসি বাংলা