পদ্মা সেতুর নাট বল্টু কার ইন্ধনে খোলা হয়েছে

প্রশ্ন মাহাবুব উল আলম হানিফের
‘শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় যে’কটি নিদর্শন রেখে গেছেন তার মধ্যে প্রধানতম প্রমত্তা পদ্মার বুকে বহুমুখী সেতু নির্মাণ। তাই পৃথিবী আজ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রয়, শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের দিকে। অথচ স্বাধীনতা, বাংলাদেশ এবং পদ্মা সেতুও চায়নি, তারা এই সেতুকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের অশুভ খেলা শুরু করেছে। প্রশ্ন জাগে পদ্মা সেতুর নাট বল্টু খুলে নেওয়ার পেছনে তাদের ইন্ধন রয়েছে কি-না।’
গতকাল মঙ্গলবার সকালে নগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৪১ নম্বর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৬ বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাসন শেষে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্যদিয়ে কালো রাত্রির কালো বন্যার অবসানের প্রেক্ষাপট সূচিত হয়। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল মহৎ অর্জন ও সাফল্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্মের পর থেকে তাকে ধ্বংস করার জন্য নানাভাবে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির নিয়মেই আওয়ামী লীগ ধ্বংস হয়নি। বরং অধিকতর শক্তিশালী হয়ে টিকে ছিল, টিকে আছে এবং টিকে থাকবে। কারণ আওয়ামী লীগের ক্ষমতার উৎস বন্দুকের নল নয়, জনগণ। মাছ যেমন পানির মধ্যে পরমায়ু পায়, ঠিক তেমনিই আওয়ামী লীগ জনগণের মাঝে পরমায়ু পেয়েছে। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে জনগণ যতদিন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় চাইবে, ততদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে। এর আগে যারা অবৈধভাবে অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা থেকে আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দেওয়ার অপচেষ্টা করবে জনগণই তাদের ধ্বংস করে দেবে এবং ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, একনাগারে ১৪ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকায় আত্মতুষ্টি ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের অবকাশ নেই। কেননা আজ দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশে নানামুখী চক্রান্তের জাল বোনা হচ্ছে। আমাদের অগোচরে কোন অপশক্তি যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে তৃণমূলস্তরের নেতাকর্মীদের সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। এই তৃণমূলস্তরটি হলো আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। তাদেরই প্রধান দায়িত্ব সমাজে যেন অপশক্তির বীজ বপিত না হয় এবং মাটি খুঁড়ে অপশক্তির বীজ তুলে ফেলে সমাজকে পাপ, অনাচার ও কলুষতামুক্ত করতে হবে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ শক্তি ও সক্ষমতা বিচার-বিবেচনায় সব সময় সক্রিয় ও গতিশীল এবং দল ও জাতির কঠিন সময় ও দুর্দিনে কখনো কক্ষচ্যুত হয়নি এবং রাজপথেই সক্রিয় ছিল ও আছে। এ ধারাবাহিকতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
সম্মেলনের উদ্বোধক নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে এত অর্জন, সাফল্য ও উন্নয়ন আর কোন আমলে হয়নি। অথচ ঈর্ষান্বিত একটি মহল যাদের জন্ম ক্যান্টমেন্টে এবং পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে অতীতে জনগণকে জিম্মি করে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে, তারা কিন্তু এসব কিছুই দেখেন না, তারা চোখ থাকিতে অন্ধ। এরা মিথ্যাচারে পটু।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নগর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রের নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুযায়ী সংগঠনের স্তর ও কাঠামোকে বিনির্মাণ করে চলেছে। আমরা সাংগঠনিক সুদৃঢ় ঐক্য ও শৃঙ্খলাকে যথাযথ অনুসরণ করে চলেছি। এ ক্ষেত্রে কখনো ব্যত্যয় ঘটতে দেওয়া হয়নি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষের দিকে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনকে নগর আওয়ামী লীগ চ্যালেঞ্জ হিসেবে গড়ে তুলে সংগঠনের তৃণমূলস্তরের কাঠামো ও নেতৃত্ব সৃষ্টিতে উদ্যোগী হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের ব্রত ও একমাত্র লক্ষ্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ণাঙ্গ তিনটি এবং তিনটি আংশিক আসনসহ মোট ৬টি আসনে কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তার বিজয় শতভাগ নিশ্চিত করা-এই ব্রত ও লক্ষ্য পূরণে নগর আওয়ামী লীগ তৃণমূলস্তরে নতুন রক্তের সঞ্চালন ঘটাতে আগ্রহী। আমরা চাই তৃণমূলস্তরের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে প্রবীণ ও অভিজ্ঞদের সাথে নতুনের মেলবন্ধন ঘটাতে।
পতেঙ্গার বাটার ফ্লাই পার্কে পতেঙ্গা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছালেহ আহমদ এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কার্যনির্বাহী সদস্য কামরুল হাসান বুলু, পতেঙ্গ থানা আওয়ামী লীগের আবদুল হালিম, এমএম ইসলাম।
সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য শফর আলী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক হাজী আবু তাহের, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য জাফর আলম চৌধুরী, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, হাজী বেলাল আহমেদ, ৪০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজাদ প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি