নেতৃত্বে আবারও মোছলেম-মফিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক »

একাধিকবার সম্মেলন পেছানোর পর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে আয়োজন করা হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন।

গতকাল সোমবার নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়াম মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচিত করা হয়েছে।

তাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করবেন বলে জানান তিনি।

২০০৫ সালের ২৩ জুলাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। তখন সভাপতি ও সম্পাদক হয়েছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও মোছলেম উদ্দিন আহমেদ। এরপর ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর ২০১৩ সালে মোছলেম উদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও মফিজুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করেন।

এবারের সম্মেলনেও এই দুজনকে পুনরায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। প্রথম অধিবেশনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।
দুপুরে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। নিয়ম অনুযায়ী এ অধিবেশনে কাউন্সিলরদের ভোটে কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছে। তবে প্রকাশ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী না থাকায় পুনরায় বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

উদ্বোধকের বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানে দেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। এ সাফল্য শেখ হাসিনার, এই সাফল্য আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। তৃণমূল আওয়ামী লীগের ঐক্য ধরে রাখা গেলে শেখ হাসিনার প্রশংসিত অর্জনগুলোর কারণে আওয়ামী লীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে। তূণমূল আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী থাকলে থাকলে কেউ আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারবে না।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যে দলের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা এনেছিলেন। দেশে আওয়ামী লীগের মত মানুষের সেবা দিয়েছে এমন কোনো দল নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদ্যুতের উৎপাদন বেড়েছে অনেকাংশে। উন্নয়নের যে ধারা দেখা যাচ্ছে তাতে বিশ্লেষকরা বলছেন শীঘ্রই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। তাই এ দেশে শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার।

আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি বলেন, জন্মলগ্ন থেকে তৃণমূলের নেতারাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রেখেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে নানা সমস্যা নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে আওয়ামী লীগ। অনেক নেতা দল ত্যাগ করেছেন। কিন্তু কর্মীরা কখনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বেঈমানি করেনি।

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেছেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের বিরুদ্ধে চলমান সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের সবাইকে সুসংগঠিত হতে হবে, কোনও নেতার নামে স্লোগান না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হোন। নির্বাচনের আরেকটি বছর বাকি রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেছেন, সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে নেতা-কর্মীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকতে হবে। দেশি-বিদেশি চক্র দেশ নিয়ে চক্রান্ত করছে। আমরা তাদের শক্ত হাতে দমন করবো। ভার্চুয়ালি দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল ষড়যন্ত্র ভার্চুয়ালি জবাব দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বলবো, মিছিল-মিটিং, ব্যানার-পোস্টারে নিজেকে বেশি নিমজ্জিত না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দীন আহমদ এমপির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, ড. আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী এমপি।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।