নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে নিশ্চয়ই

সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিন প্রতিমন্ত্রীসহ বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৫৫ জন হেরেছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের ২৬ জন প্রার্থী। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন ১৬ জন সংসদ সদস্য। তাঁদের মধ্যে ১৩ জনই হেরেছেন। জাতীয় পার্টির বর্তমান ১২ জন সংসদ সদস্যও এবার ভোটে হেরেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক তিনটি দলের শীর্ষ তিন নেতাও ভোটে হেরেছেন; যাঁরা বর্তমানে সংসদ সদস্য। হেরেছেন বিকল্পধারার একজন সংসদ সদস্যও।
হবিগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী পরাজিত হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় ও যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার সুমনের কাছে।
এ ছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। ক্ষমতাসীনদের পর সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, ৬২টি আসনে। এর মধ্যে তিনটি আসন ছাড়া বাকি সব আসনের জয়ী প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই যুক্ত। আর জাতীয় পার্টি জয় পেয়েছে ১১টি আসনে। সংসদের আসন ৩০০টি, ভোট হয়েছে ২৯৯টিতে। একটি আসনের একটি কেন্দ্রের ভোটের ফল স্থগিত আছে।
নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে যাঁরা পরাজিত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বেশ পরিচিত ও আলোচিত কয়েকজন। এঁদের মধ্যে নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে অসীম কুমার উকিল, মুন্সিগঞ্জ-৩ (মুন্সিগঞ্জ সদর-গজারিয়া) আসনে মৃণাল কান্তি দাস, বরগুনা-১ আসনে (সদর-আমতলী-তালতলী) ধীরেন্দ্র দেবনাথ, মানিকগঞ্জ-২ আসনে সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী, যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে শাহীন চাকলাদার, গাজীপুর-৫ (সদর-কালীগঞ্জ) আসনে মেহের আফরোজ চুমকি এবং চট্টগ্রামের পটিয়া আসনে সাবেক হুইপ শামসুল হক, দলের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন।
এছাড়া হেরেছেন যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। ঢাকা-১৯ আসনে (সাভার ও আমিনবাজারের একাংশ) ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে এবার সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন মনোনয়ন পাননি। এই তিনজন নির্বাচনও করেননি।
অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণলমূলক নির্বাচনের দাবি করলেও এই চিত্র দেখে বলার উপায় নেই যে, নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। যদি তা না হতো তাহলে এত বাঘা বাঘা প্রার্থী ধরাশায়ী হতেন না। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন কিন্তু তা সত্ত্বেও যে তারা ভোটে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি তা বোঝাই যাচ্ছে। ফলে নির্বাচন একতরফা হয়েছে, অগ্রহণযোগ্য হয়েছে তা বলার সুযোগ নেই।
সে সঙ্গে আরেকটি দিক লক্ষণীয় যে, ক্ষমতায় থাকলে অনেকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরে যায়। অনেকে ভাবে ক্ষমতা বুঝি চিরস্থায়ী। কিন্তু তা নয়। ভুক্তভোগী, বঞ্চিত মানুষ সুযোগ পেলেই তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে। কাজেই যারা পুনর্বার নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, যাঁরা নতুনভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের এখন থেকেই শিক্ষাটা নেওয়া উচিত। জনমতকে তোয়াক্কা করে চলা উচিত। মনে রাখতে হবে পাঁচ বছর পর তাঁদেরকে জনগণের কাছে কৈফিয়ত দিতেই হবে।