নিরাপদ রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করুন

চট্টগ্রাম নগরে এখন মাত্র ছয়টি পদচারী-সেতু আছে। এগুলোর মধ্যে তিনটি কোনোভাবে ব্যবহার করা হয়। দুটির প্রবেশমুখে অবৈধ দোকান ও ময়লা-আবর্জনা থাকায় তা ব্যবহার করতে পারেন না পথচারীরা। অপরটি চলন্ত (স্কেলেটর) পদচারী-সেতু। এটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
সুপ্রভাতের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দীর্ঘদিনের দাবির পর নগরের চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সামনে বসানো হয় চলন্ত পদচারী-সেতু। প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই পদচারী-সেতু চালুর দুই মাসের মাথায় বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় চার বছর ধরে তালা ঝুলছে সেতুর ফটকে।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনা দিনকে দিন বাড়ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ পদচারী সেতুর অভাবে পথচারীদের অনিরাপদভাবে রাস্তা পার হওয়া। চট্টগ্রাম নগরীও এর ব্যতিক্রম নয়। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন মোড়ে পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্রুতগামী যানবাহন এড়িয়ে রাস্তা পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ এসব পয়েন্টের বেশিরভাগেই কোনো পদচারী সেতু নেই।
চট্টগ্রাম নগরের জনসংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। এ কারণে নগরের ব্যস্ততম মোড়গুলোয় মানুষের জমায়েত ও যাতায়াত বেড়েছে। এতে যানজটও বাড়ছে। যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে ২০১৯ সালে নগর-পরিকল্পনাবিদেরা শহরের ৩৮টি মোড়ে পদচারী-সেতু স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন সিটি করপোরেশনকে।
সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩৮টি পদচারী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে চসিক। ‘এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন রাস্তার উন্নয়ন এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অধীনে এই সেতুগুলো নির্মিত হবে বলে চসিক সূত্রে জানা গেছে।
২০২২ এর ৪ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় ২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। ২০২৩ এর মে মাসের শেষে প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করতে পারেনি।
নগরের জিইসি, আগ্রাবাদ বাদামতলী, অক্সিজেন, দেওয়ানহাট, ইস্পাহানি মোড় ও ষোলোশহর দুই নম্বরে প্রতিদিন লাখো মানুষ রাস্তা পারাপার হয়। সবচেয়ে বেশি পারাপার হয় আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে। সেখানে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার পথচারী পারাপার হয় বলে পুলিশের জরিপে উঠে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জিইসি মোড়। এই মোড়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় পারাপার হয় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার পথচারী।
শহর এলাকায় দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো হলো সড়কের মোড়ে পদচারী সেতু না থাকা, ব্যস্ত সড়কে ফুটপাথ না থাকা এবং যাত্রী নেওয়ার জন্য গাড়িগুলোর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা। চিহ্নিত করা জায়গায় পদচারী সেতু না থাকায় রাস্তা পারাপারের জন্য মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নিরাপদে রাস্তা পারাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে।