নিত্যপণ্যের বাজারে অসন্তোষ ক্রেতাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ভালো থাকা সত্ত্বেও ক্রমেই লাগামহীন হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো পণ্যের দাম না কমলেও ফের বেড়েছে পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, ডালসহ অধিকাংশ সবজির দাম।

এদিকে সরকার নির্ধারিত দামে মিলছে না কোনো পণ্য। এ ছাড়া গত কয়েক সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় যথারীতি চড়া আছে মুরগি মাংস ও ডিমের দাম। নিত্যপণ্যের এ মূল্যবৃদ্ধিতে ক্রেতাদের অসন্তোষ দিন দিন বাড়ছে।

নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে চাল, চিনি এবং ভোজ্যতেলের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের পণ্য বাজারে এসব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।

ক্রেতারা বলছেন, সরকার বাজার দর নির্ধারণ করে দিলেও তা শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে মাঠে তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি নেই। এ কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা তার সুযোগ নিচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর খাতুনগঞ্জ, রেয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে ভোগ্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের অসন্তোষের চিত্র দেখা যায়।

বক্সিরহাটের কথা হয় মো. শাহ আলম নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে। তিনি বলেন, করপোরেট কোম্পানির অল্প বেতন নিয়ে ৫ জনের সংসার। প্রতিমাসে বেতনের চেয়ে ঋণই বেশি হচ্ছে। গত পাঁচ বছর আগেই যে বেতন পেতাম এখনো তা পাই। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সব বদলিয়েছে কিন্তু আমাদের মতো চাকরিজীরীদের বেতন বাড়েনি। সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে তেল, চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যে। কিন্তু বাজারে সেই দরে তা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের তদারকির অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা এমন সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে চলতি মাসের শুরুতে সরকার সয়াবিন ও চিনির বাজার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে ওই দরে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল বাজারে নির্ধারিত দরের চেয়েও ১৪ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে লিটার প্রতি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা। যা সরকার ১২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করছিল ১৭৬ টাকা। আর বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করেছে ২০৫ টাকার উপরে। যা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৯৯ টাকা। অন্যদিকে চিনির বাজার দর ১৬ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে নগরীর সর্বত্র এলাকায় এ পণ্য বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকার উপরে।

গতকাল সকালে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৪০ টাকায় বিক্রি হলেও দুপুরের পর বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।

সয়াবিন ও চিনির নির্ধারিত দরে কেন বিক্রি করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে বক্সিরহাটের এক বিক্রেতা বলেন, সরকার কোন পণ্যের দর নির্ধারণ করলে ব্যবসায়ীরা মেনে চলছে কিনা তা তদারকি করা জরুরি। আমাদের কাছে পাইকাররা এখনো নির্ধারিত দরে চিনি ও তেল বিক্রি করছে না। ফলে আমাদের পক্ষে নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ছাড়া আমদানি বন্ধ থাকাতেই সপ্তাহের ব্যবধানে আরো বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। যা সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজে প্রায় ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে খুচরা বাজারে ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা দরে। মাসের ব্যবধানে এ পণ্যের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।

এদিকে বাজারে কয়েকদিন ধরে স্থিতিশীল থাকার পর গতকাল থেকেই আবারো বাড়তে শুরু করছে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দর। এক সপÍাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি ব্রয়লারে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২২৫ থেকে ২৩০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯৫ থেকে ২০৫ টাকা। অন্যদিকে সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা দরে। আর দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৬২০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে।

এ ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে ডজনপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা। গতকাল বাজারে লেয়ার (লাল) ডিম বিক্রি হয়েছে ডজন ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা।
গরুর মাংস গত দুই সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকলেও গতকাল আবারো বেড়েছে। বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে হাড়-চর্বিসহ ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা আর হাড়ছাড়া ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা।

এদিকে এ সপ্তাহেও যথারীতি চড়া ছিল সবজির বাজার। আবহাওয়াজনিত কারণে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সবজি না আসাতেই সবজির বাজার কিছুটা চড়া বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল বাজারে সবচেয়ে চড়া দরে বিক্রি হয়েছে কাঁচামরিচ, গাজর ও শসা। রেয়াজউদ্দিন বাজারে সকালে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকায় আর দুপুরে বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকার উপরে। শসা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা বিক্রি হলেও গাজর বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর টমেটো ও আলু বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। এ ছাড়া বেগুন, ঝিঙ্গা, কাকরোল, বরবটি, লাউ, কচুরলতি, চিচিঙ্গাসহ প্রায় অধিকাংশ সবজি বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে।

অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের বাজার দর রয়েছে স্থিতিতে। বাজারে আকারভেদে শিং মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, রুই ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, আইড় ও শোল মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় এবং কোরালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকার উপরে। অন্যদিকে দেশি বড় চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। হরিণা, বাগদা ও গলদা আকারভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে।

এ বিষয়ে ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে বাজার তদারকির কথা প্রচার করছে, প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে মাঠে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। ফলে তদারকিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

বাজার তদারকির বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করছি।

চিনির বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে বেশ কয়েকটি হাতবদল হয়। চিনির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে মধ্যস্থতাকারীরা। যাদের পেতে প্রশাসনের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। আশা করি শীঘ্রই এ পণ্যের বাজার স্বাভাবিক হবে।