নিউমোনিয়ার সর্বাধুনিক টিকার ট্রায়াল শুরু হচ্ছে কলকাতায়

সুপ্রভাত ডেস্ক

বয়সকালে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার যতগুলো কারণ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো নিউমোনিয়া। ফুসফুসের এই সংক্রমণের নেপথ্যে ব্যাকটেরিয়াকুলে সবচেয়ে বড় ‘ভিলেন’ স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি।
স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনির ভ্যাকসিন বাজারে মেলে ঠিকই। কিন্তু সেটি খলনায়ক ব্যাকটেরিয়ার ১৩টি স্ট্রেন থেকে সুরক্ষা দেয়। ফলে নিতে হয় একটি বুস্টার ডোজ। কিন্তু এবার আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে এমন একটি নিউমোনোকক্কাল ভ্যাকসিন, যা ২০টি স্ট্রেন সামলাতে সক্ষম। এ ভ্যাকসিনের একটি ডোজ নিলেই যথেষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অনুমোদন পাওয়ার পর একটি নামজাদা বহুজাতিক কোম্পানির তৈরি সেই ভ্যাকসিনের ভারতে আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে অচিরেই ভারতীয়দের ওপরে শুরু হচ্ছে ২০ভিপিএনসি নামের সেই টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। তাতে শামিল হচ্ছে কলকাতাও। এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের বেসরকারি তত্ত্বাবধায়ক সংস্থা ‘ক্লিনিমেড’ সূত্রে জানানো হয়েছে, সারা দেশের যে ১০টি হাসপাতালে ট্রায়াল হবে, তার মধ্যে রয়েছে ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনও। প্রাপ্তবয়স্ক মোট ৪০০ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ট্রপিক্যালে ৪০ জনের ওপর হবে ওই টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ।
ওই সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান স্নেহেন্দু কোনার জানাচ্ছেন, স্বেচ্ছাসেবকদের রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। সব ঠিক থাকলে আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে হয়ে যাবে ট্রায়াল।
তিনি বলেন, ২০-ভ্যালেন্ট নিউমনোকক্কাল এই ভ্যাকসিনটির সুবিধা হলো এটি একবার নিলেই চলবে। কোনও বুস্টার ডোজ নিতে হবে না।
তিনি জানান, যেহেতু নিউমোনিয়ায় প্রাণ সংশয়ের ঝুঁকি মূলত বয়স্কদেরই, তাই ট্রায়ালে ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের ওপর সবচেয়ে বেশি এই টিকা প্রয়োগের চেষ্টা করা হবে।
স্বাভাবিকভাবেই এই ট্রায়ালের দিকে চেয়ে রয়েছেন চিকিৎসকরা। কেননা পরিসংখ্যান বলছে, ১৮-৬৪ বছর, ৬৫-৮৪ বছর এবং ৮৫ বছরের বেশি বয়সে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার যথাক্রমে ৭.৩ শতাংশ, ১৬.১ শতাংশ এবং ২৯.৭ শতাংশ। অর্থাৎ বয়সের সঙ্গে বাড়ে ঝুঁকিও। ভাইরাসের হামলায় নিউমোনিয়া হয় ঠিকই। কিন্তু প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যাকটেরিয়াই দায়ী। আর যত রকম ব্যাকটেরিয়ার কারণে নিউমোনিয়া হয়, তার মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দায়ী এই স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি। এই ব্যাকটেরিয়ার প্রায় ১০০ রকম স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে। যার মধ্যে মূলত তিন রকম স্ট্রেনই দায়ী সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের জন্য। ২২.২ শতাংশ ক্ষেত্রে ১৯এ, ১৩.৮ শতাংশ ক্ষেত্রে ১৯ এবং ১১.১ শতাংশ ক্ষেত্রে ২৩এফ স্ট্রেন নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। এই নিউমনোকক্কাল ভ্যাকসিনটি এগুলোর পাশাপাশি আরও ১৭টি স্ট্রেন থেকেও সুরক্ষা দেয়।