নাফির অপেক্ষা

নিলুফার জাহান :

জানালার গ্রিলটা ধরে বন্দি পাখির মতো বাইরে তাকিয়ে আছে নাফি। একটু বাইরে যাওয়ার জন্য মনটা ছোটাছুটি করছে।

মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘মামণি, দুষ্টু করোনা গেছে?

এবার কি বাইরে খেলতে যেতে পারবো?’

‘না বাবা, আরো কিছু দিন ঘরেই খেলো।’

‘মা মাহিন, মিশু, লিওন ওদের সাথে খেলবো?

ওদের মা আসতে দেবে না ওদের এখন।

এখন কেউ কারো বাসায় যেতে পারে না।

আর কারো সাথে খেলতে  যাবে না তুমি একাই খেলো। এইতো আমি আছি।

এখন করোনার জীবাণু সব দিকে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়।

মামণি, ‘জীবাণু কী?’ জীবাণু কোথায় থাকে?

‘জীবাণু হলো ছোট্ট জীব । খালি চোখে দেখা যায় না।

শরীরে ঢুকে মানুষকে অসুস্থ করে দেয়।’

‘মিশুর গায়ে কী জীবাণু আছে?’

‘জানি না। তবে জীবাণুর ভয়ে মানুষ বাইরে যায় না এখন’ লক ডাউন করা হয়েছে সব দিকে।

এতো প্রশ্ন করো না বাবা। এই যে তোমার খেলনা।’

‘কিন্তু বাইরে তো বাবা আর রহিম চাচা গেছে। রাস্তায় কত মানুষ হাঁটছে।

সবার মুখে কাপড় লাগানো কেন মা?’

‘জীবাণু যাতে নাকে মুখে ঢুকতে না পারে এজন্য ই মুখে মাস্ক পরেছে। বুঝেছো, বাবা!’

তাহলে আমাকে একটা মাস্ক দাও না। মাস্ক লাগিয়ে আমিও বাইরে যাই।

না, ওরা তো দরকারি কাজে বাইরে গেছে। তুমি ছোট তো । ঘরের ভেতর থাকো।

বাইরে খেলাটা দরকারি না, মা?

‘উফ্ ছেলেটাকে নিয়ে পারা যায় না । কেবল প্রশ্ন করে।’

‘না খেলার দরকার নাই।’

কিন্তু আমার টিচার বলছিলেন

-‘করবে খেলা

বিকেল বেলা

শক্তি হবে তবে মেলা’

‘কিন্তু এখন করোনার সময় খেলা যাবে না।

কিছু দিন পর খেলবে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে, মা।’

খেলতে গিয়ে নাফির মনে হলো কয়েক দিন পরে তো স্কুল খুলবে।

স্কুল খুললে  যেতে পারবো স্কুলে?

বন্ধুরা সবাই আসবে না?’

‘আচ্ছা , করোনা চলে গেলে স্কুল খুলবে ,সবাই আসবে, খেলবে।’

অনেক দিন ধরে ঢাকায় থাকছেন মাহমুদ ও তার স্ত্রী।

সাবধানে চলাফেরা করতে হয়।  অপ্রয়োজনে বাইরে যান না।

ছোট্ট নাফি। সেও ঘরের ভেতর থাকছে সারাক্ষণ।

বয়স ছয় বছর। শুধু কথা বলে যায়।

খুব কৌতূহলী মন তাঁর । প্রশ্ন করে তাই

এখন বন্ধুদের ভাবনায় বিভোর স্কুল খুললে  বাবার সাথে স্কুলে যাবো না, মামণি?

আমরা কবে দাদুর বাড়ি যাবো  ? আচ্ছা তোমার বাবা আসুক ।

নতুন শার্ট কিনে দিতে হবে কিন্তু ছেলেকে বোঝানো খুব কষ্টের।

বাড়ি গেলে সবার সাথে ঘুরে বেড়াবে। আনন্দ করবে।

সবার সাথে গল্প  করবে। কোর্মা পোলাও খাবে ।

মা বাবার সাথে ঘুরতে যাবে দাদুর বাড়িতে যাবে অনেক স্বপ্ন দেখতে  থাকে

আচ্ছা, দোয়া করো যেন করোনা তাড়াতাড়ি মারা যায়।

ছোট্ট নাফি দুই হাত তুলে বলতে থাকে ‘হে আল্লাহ, তুমি এখন করোনা দিও না সব করোনা মেরে ফেলো তুমি।’

বিকাল হতেই বাবা এলে দৌড়ে গিয়ে বললো ‘বাবা, কবে বাড়ি যাবে। দাদা দাদি কাছে গিয়ে গল্প শুনবো।

মা বলেছে দোয়া করলে করোনা মরে যাবে’

‘ও তাই ? ঠিক বলেছেন তোমার মা।’

আর নাফি অপেক্ষা করতে থাকে কবে গ্রামের বাড়ি যাবে দাদা দাদি চাচা চাচি সবার সাথে দেখা হবে চাচাতো ভাই বোনদের সাথে সাইকেল চালাবে। গাছের থেকে মজার সব ফলমূল খাবে।

মায়ের থেকে ফোনটা নিয়ে সে দাদা দাদিকে ফোন করে দাদা দাদি জানো আব্বু আম্মু বলেছে দোয়া করলে করোনা মরে যাবে’ আগের মতো স্কুলে যেতে পারব । খেলতে পারব।

দাদা দাদী খুব খুশি হয়ে ওর কথা শোনে। ঠিক বলেছো দাদাভাই । ‘দোয়া করছি যেন আল্লাহ তাড়াতাড়ি সবাইকে মুক্ত  করেন।’

নাফি অপেক্ষা করতে থাকে করোনাহীন সুন্দর একটা সময়ের…..।